আপডেট

x

সেবার মনোভাব নিয়ে আসা চিকিৎসকরা কিন্তু পালিয়ে যায়নি

শুক্রবার, ১০ এপ্রিল ২০২০ | ১০:০৬ অপরাহ্ণ |

সেবার মনোভাব নিয়ে আসা চিকিৎসকরা কিন্তু পালিয়ে যায়নি
Spread the love

সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মহামারী করোনা ভাইরাসের আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন বেড়ে চলেছে। সরকার সচেতনতার লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। ঘোষণা করা হয়েছে সাধারণ ছুটি, কিছু এলাকা লকডাউন করে রাখা হয়েছে। তবে জরুরি প্রয়োজনীয় অফিস গুলো খোলা রয়েছে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে ওই সকল অফিস বা প্রতিষ্ঠান গুলো নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

কিন্তু এই ভাইরাসের প্রভাবে চিকিৎসকরা অনেক বেশি ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে সরকারি হাসপাতাল গুলোতে৷ তবে কিছু চিকিৎসক দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে সরকারি চাকরি ছেড়ে দেওয়ার কথা জানা গেছে। অনেকে আবার তাদের বেসরকারি হাসপাতালে প্রেকটিস বন্ধ রেখেছেন। চিকিৎসকদের এসব বিষয় নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। সরকারি চিকিৎসকদের কিছুটা ক্ষোভ রয়েছে তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে। তারা বলছেন, সরকারিভাবে যেসব নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা দিয়েছে তা পর্যাপ্ত নয়। করোনা আক্রান্ত রোগিদের যে সকল চিকিৎসক সেবা দিবেন, তাদের একদিনে তিনটি পিপিই ব্যবহার করতে হবে। সে হিসেবে মাসে ৯০টি পিপিই লাগবে একজন চিকিৎসকের। কিন্তু সরকারি ওয়েবসাইটে দেখা যায়, বিপুল সংখ্যক পিপিই ও অন্যান্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু সরজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে কেউ একটি বা দুটি পিপিই পেয়েছেন। অনেকেই অভিযোগ করেছেন, যে পিপিই পেয়েছেন তা মানসম্মত নয়। এই বিতরণ নিয়ে অনেক চিকিৎসকের মনেই শঙ্কা এসব সরঞ্জাম এর অপব্যবহার বা দুর্নীতি হচ্ছে কিনা! এখানে দুর্নীতি ও অপব্যবহার রোধ করা না গেলে, অনেক স্বাস্থ্য কর্মী ও হাসপাতালের স্টাফ কোয়ারেনটাইনে চলে যেতে হবে। চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার থেকে বাঁচাতে সুরক্ষা সরঞ্জাম এর সঠিক যোগান দিতে হবে।

webnewsdesign.com

তারপরেও বেশির ভাগ চিকিৎসক ঝুঁকি নিয়ে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দিতে হাজির হচ্ছেন। বেশির ভাগ চিকিৎসকই নিজ খরচে তাদের নিরাপত্তামূলক সামগ্রী ক্রয় করছেন।

স্যালুট জানাই ওই সকল চিকিৎসকদের যারা এই ক্রান্তিলগ্নে ঝুঁকি নিয়ে হাসপাতালে রোগি দেখে যাচ্ছেন। কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের এক আবাসিক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে হাজিরা দিয়ে পালিয়ে পাশের ক্লিনিকে রোগি দেখার অভিযোগ রয়েছে। তিনি কি সবার চেয়ে উর্ধ্বে? উনার মত চিকিৎসকের কারণে সমালোচনায় পড়তে হয় ঝুঁকি নিয়ে সেবা দেওয়া অন্য চিকিৎসকদের।

সরকারি হাসপাতালে বেশির ভাগ রোগির সংস্পর্শে আসেন জরুরি বিভাগের চিকিৎসক। কথা হয় ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সৈয়দ আরিফুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, সামনে আমাদের অনিশ্চিত ভবিষ্য। সম্ভাব্য বিপদ মোকাবেলা করতে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। স্বাস্থ্য কর্মীদের পিপিই প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সামগ্রী দিতে হবে। সাধারণ মানুষের সাধারণ সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে আসা ঠিক হবে না। বাসা থেকে এখন কোন ভাবেই বের হওয়া ঠিক হবে না।

এদিকে দেশে করোনা আক্রান্ত রোগির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে বেসরকারি হাসপাতালে অধিকাংশ চিকিৎসক প্রাইভেট প্রেকটিস করা বন্ধ করে দিয়েছেন। তবে ওই সকল চিকিৎসকরা বলছেন, করোনা ভাইরাস থেকে নিরাপত্তার অংশ হিসেবে তারা এখন রোগি দেখছেন না।

এই বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিএমএ’র সাধারণ সম্পাদক এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিক সমিতির সভাপতি ডা. আবু সাঈদ বলেন, অনেক বেসরকারি হাসপাতাল নিজ উদ্যোগে শারীরিক নিরাপত্তা নিয়ে তাদের চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই অবস্থায় বেসরকারি হাসপাতাল গুলো কিভাবে চলবে এর কোন দিক নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। জেলা সিভিল সার্জন অফিস থেকে বেসরকারি ক্লিনিকগুলোর সাথে এখনো কেউ যোগাযোগ করেননি।

চিকিৎসক দম্পতি মাহবুবুর রহমান (এমিল) ও সায়ীদা সামিহা। দুইজনই বেসরকারি দুইটি ডায়াবেটিক ক্লিনিকে করোনা ভাইরাসের পাদুর্ভাবের মধ্যে রোগিদের চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাচ্ছেন। স্ত্রী বসেন জেলা শহরের কাউতলীতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ডায়াবেটিক সমিতিতে এবং স্বামী কাজিপাড়ায় দি ডায়াবেটিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী দেখেন। চিকিৎসক মাহবুবুর রহমানের চেম্বারে গিয়ে দেখা যায়, উনি পিপিই ও মাক্স পড়ে রোগিদের সেবা দিচ্ছেন। কথা হলে মাহবুবুর রহমান বলেন, চিকিৎসক হয়ে যদি দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে সেবা না দিতে পারি তাহলে লাভ কি! এই পিপিই চিকিৎসক নেতা আবু সাঈদ স্যার একটি প্রদান করেছেন আর বাকি সব পিপিই নিজের কিনে রেখেছি। সামনে যেহেতু রোজা তাই ডায়বেটিস রোগীদের ওষুধ এডজাস্ট করতে হবে তাই এই মুহূর্তে রোগীদের কথা ভেবে কাজ করছি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিএমএ’র পক্ষ থেকে মোবাইল হটলাইনের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। এছাড়াও চিকিৎসকরা নিজেরা উদ্যোগী হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গ্রুপ ও পেইজ তৈরি করে চিকিৎসা সেবা দিয়ে চলেছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে জরুরি সেবা জোরদার ও টেলিমেডিসিন সেবায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক যুক্ত করলে চিকিৎসা সেবা আরও বেগবান হবে বলে মনে করেন চিকিৎসকরা৷

আমার ব্যকিগত অভিমত, গুটিকয়েক চিকিৎসকের অপকর্মে দ্বায় সকল চিকিৎসককে দেওয়া উচিৎ নয়৷ তাদের মধ্যেও ভাল মন্দ থাকতে পারে। যারা দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে নিজেদের দায়িত্ব পালনে অবহেলা করে তাদের নিয়ে সমালোচনা করুন। কিন্তু সত্যিকারের সেবা দেওয়ার মনোভাব নিয়ে কাজ করা চিকিৎসকদের পাশে থাকুন ও উৎসাহ প্রদান করুন। তারা কিন্তু পালিয়ে যায়নি এই ক্রান্তিলগ্নে।

আবুল হাসনাত মোঃ রাফি
সংবাদকর্মী
rafeehasnat01@gmail.com

মন্তব্য করুন

Development by: webnewsdesign.com