আপডেট

x

লাশ সামনে রেখে গর্ভের শিশুসহ প্রসূতি মৃত্যুর অভিযোগ লাখ টাকায় রফাদফা

সোমবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২২ | ৮:২১ অপরাহ্ণ |

লাশ সামনে রেখে গর্ভের শিশুসহ প্রসূতি মৃত্যুর অভিযোগ লাখ টাকায় রফাদফা
Spread the love

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা অবহেলায় গর্ভের সন্তানসহ খাদিজা বেগম (৪৫) নামে এক প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনা এক লাখ টাকায় মিমাংসা হয়েছে। রোববার (৪ ডিসেম্বর) রাতে হাসপাতালে মরদেহ রেখেই লাখ টাকায় বিষয়টি রফাদফা করা হয়। খাদিজা বেগম সদর উপজেলার মাছিহাতা ইউনিয়নের খেয়াই গ্রামের প্রবাসফেরত নয়ন মিয়ার স্ত্রী। তার ৪ ছেলে ও ১ মেয়ে রয়েছে। এরআগে, সন্ধ্যায় শহরের কুমারশীল মোড়ে গ্রীন ভিউ হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত খাদিজার ভাসুর শরিফুল হাসান সোমবার (০৫ ডিসেম্বর) দুপুরে রফাদফা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মানবিক দিক বিবেচনায় নিহত খাদিজার পরিবারকে এক লাখ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদেরকে এই টাকা দিবেন।

webnewsdesign.com

গ্রীনভিউ হাসপাতাল সম্পর্কিত আরও পড়ুনঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সিজারের সময় নবজাতকের হাত ভেঙে ফেলার অভিযোগ

খাদিজার স্বামী মো. নয়ন মিয়ার অভিযোগ, গত শনিবার (৩ ডিসেম্বর) রাতে খাদিজার বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট শুরু হলে তাকে শহরের কুমারশীলমোড় গ্রীন ভিউ স্পেশালাইজড হাসপাতালে এনে গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. জিনিয়া খানের তত্ত্বাবধানে ভর্তি করা হয়। এ সময় তার শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে অক্সিজেন লাগানো হয়। এমনকি রোববার বেলা ১১টায়ও চিকিৎসক এসে খাদিজকে দেখেননি। পরে পরিবারের লোকজন চাপ সৃষ্টি করলে চিকিৎসক এসে আল্ট্রাসনোগ্রামসহ বেশ কিছু পরীক্ষা করে জানান খাদিজা ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ও তান গর্ভের সন্তান মারা গেছে বলে জানান।  পরে হাসপাতালের চিকিৎসকরা মৃত সন্তানটিকে নরমালি প্রসব করানোর কথা জানান। পরে ডা. জিনিয়া খান খাদিজার মৃত সন্তানকে নরমালি প্রসব করানোর জন্য চেষ্টা চালানোর জন্য অবজারবেশনে রাখেন। কিন্তু তাতে খাদিজার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হতে থাকলে চিকিৎসককে বার বার সিজার করানোর কথা বলা হলেও শুনেননি। এরপর সন্ধ্যার দিকে খাদিজার হঠাৎ করে শ্বাসকষ্ট ও শরীরে খিচুনি শুরু হয়। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই তার মৃত্যু হয়।

এবিষয়ে হাসপাতালের গাইনী চিকিৎসক ডা. জিনিয়া খান বলেন, হাসপাতালে আসার পর পরীক্ষা করে দেখা যায় তার গর্ভে মৃত বাচ্ছা রয়েছে। পরে নরমাল প্রসব করানোর জন্য তাকে অবজারবেশনে রাখা হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই তার শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। কিছুক্ষণ পরে সে মারা যায়। তবে হাসপাতালের পক্ষ থেকে তাকে সব ধরণের চিকিৎসা দেয়া হয়েছিল।

গ্রীণভিউ হাসপাতাল সম্পর্কে আরও পড়ুনঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সিজারে নবজাতকের হাত ভাঙার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন

তবে অভিযোগের বিষয়ে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. মো. আবু হামেদ বাবু বলেন, রোগীর বয়স অধিক ছিল। সন্ধ্যার পর থেকে তার খিচুনি ও রক্তচাপ বেড়ে গিয়েছিল। আমরা রোগীকে বাঁচানোর জন্য সব ধরণের চেষ্টা করেছি। পরে রোগীর স্বজনদের সাথে কথা বলে মানবিক দিক থেকে তাদেরকে ১ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে এবং হাসপাতালের বিল মওকুফ করে দেয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিভিল সার্জন ডা. একরামউল্লাহ জানান, বিষয়টি আমরা শুনেছি। এ বিষয়ে আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারা সরেজমিনে গিয়ে আমাদের জানাবেন। পরবর্তীতে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।

গ্রীণভিউ হাসপাতালর প্রসঙ্গে আরও পড়ুনঃ গ্রীনভিউ হাসপাতালে সিজারের সময় নবজাতকের হাত ভাঙার ঘটনায় তদন্ত শুরু

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। রোগীর স্বজনদের লিখিত অভিযোগের কথা বলা হয়। কিন্তু কি কারণে তারা অভিযোগ করেননি সেটা আমরা জানিনা। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহন করা হবে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া গ্রীণভিউ হাসপাতালের সংক্রান্ত আরও পড়ুনঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নবজাতকের হাত ভাঙার ৫দিনের তদন্ত প্রতিবেদন মিলেনি ৩৫দিনেও

এর আগে, চলতি বছরের ৭ মার্চ এক প্রসূতির সিজারিয়ান অপারেশনকালে নবজাতক শিশুর হাত ভেঙে ফেলার অভিযোগ উঠে এই গ্রীণভিউ হাসপাতালের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও সেই তদন্ত কমিটির রিপোর্ট এখনো আলোর মুখ দেখেনি৷

 

মন্তব্য করুন

Development by: webnewsdesign.com