আপডেট

x

‘স্বাস্থ্য কর্মীরা মারা গিয়ে আমাদের কি শিখিয়ে গেছেন’

সোমবার, ০৪ মে ২০২০ | ৯:৩০ অপরাহ্ণ |

‘স্বাস্থ্য কর্মীরা মারা গিয়ে আমাদের কি শিখিয়ে গেছেন’
চিকিৎসক দম্পতি সৈয়দ আরিফুল ইসলাম ও মোহিনী বেগম
Spread the love

মহামারী করোনা ভাইরাসের সম্মুখ যোদ্ধা চিকিৎসকরা। অসংখ্য চিকিৎসক আক্রান্তদের সেবা দিতে গিয়ে এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়ও করোনা ভাইরাস আক্রান্তের তালিকায় চিকিৎসক রয়েছেন। এই বিষয়টি নিয়ে অনেক চিকিৎসক উদ্ধিগ্ন।

২৫০শয্যা বিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল জেলার সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র। এই হাসপাতালে কর্মরত আছেন চিকিৎসক দম্পতি সৈয়দ আরিফুল ইসলাম ও মোহিনী বেগম। এই মহামারীর মধ্যেও অন্যান্য চিকিৎসকদের সাথে তাদেরও কর্তব্য পালন করে যাচ্ছেন। স্বামী সৈয়দ আরিফুল ইসলাম সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দায়িত্ব পালন করছেন, আর স্ত্রী মোহিনী বেগম সদর হাসপাতালের গাইনী বিভাগে দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু সম্প্রতি তাকে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে জেলার বক্ষব্যাধি হাসপাতালে স্থাপিত আইসোলেশনে করোনা আক্রান্তদের সেবায়।

webnewsdesign.com

বর্তমান পরিস্থিতিতে চিকিৎসকরা যে শিক্ষা পেয়েছেন, তা নিয়ে লিখেন চিকিৎসক সৈয়দ আরিফুল ইসলাম

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্বাস্থ্য কর্মীরা মৃত্যুবরণ করে আমাদের যা শিখিয়ে গেছেন তা নিচে বর্ণিত হয়েছে:

১. বেশির ভাগ  নিজের অজান্তেই সংক্রমিত হয়েছেন, নন কোভিড হাসপাতালে।
২. করোনা মহামারি কে গুরুত্ব না দেয়া (সঠিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নেয়া)।
৩. প্রত্যেক রোগীকে করোনা আক্রান্ত মনে করা, প্রমাণিত হবার আগ পর্যন্ত। অনেক ক্ষেত্রেই রোগী তথ্য গোপন করে বা মিথ্যে বলে।
৪. Infection control precaution না মানা। বিশেষ করে সাসপেক্টেড কেস এ।
৫. উপসর্গ বিহীন বিশাল জনগোষ্ঠী রোগটি বেশি ছড়ায়।
৬. অধিক হারে পরীক্ষা করা।
৭. পর্যায় ক্রমে সকল স্বাস্থ্য কর্মীদের টেস্ট করা।
৮. পি পি ই: স্বল্পতা, মান, অপচয় জনিত স্বল্পতা, ভালো মাস্ক না থাকা, বারবার ব্যবহার, ঠিকমতো খুলতে না পারা ইত্যাদি।
৯. কাজ শেষে নিজেকে আলাদা না রাখা।
১০. অন্যান্য স্টাফ যেমন পিয়ন, ড্রাইভার, লন্ড্রি, ক্লিনার এদের থেকে সংক্রমন। কারণ এদের যথাযথ পি পি ই না থাকা, সক্রমন প্রতিরোধ জ্ঞান না থাকা।
১১. দীর্ঘ কর্মঘন্টা
১২. সংক্রমন প্রতিরোধ গাইডলাইন না থাকা বা না মানা।
১৩. হাসপাতালে কার্যকর ট্রিয়াজ সিস্টেম না থাকা। ঢোকার মুখে ট্রিয়াজ, মাস্ক নিশ্চিত, হাত ধুলে এবং অন্তত ১-২ মিটার দূরে দূরে অবস্থান নিশ্চিত করতে পারলে সংক্রমন  সম্ভাবনা অনেক কমে।
১৪. রোগী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের চলার রুট আলাদা করলে সংক্রমণ ঝুঁকি কমে।
১৫. অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজ, যেমন ইন্টিউবেশন এর সময় সম্ভাব্য কম কর্মী থাকা।
১৬. স্থানীয় সৃজনশীল প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা, ট্রাফিকিং সংক্রমণ কমায়।
১৬. রোগীর মাস্ক নিশ্চিত করা ও দূরত্ব রক্ষা খুবই কার্যকর।
১৬. কথা কম বলা বা বলানো উত্তম।
১৭.  ভালো ভেন্টিলেশন সমৃদ্ধ কক্ষ, পাখা না চালানোই ভাল।
১৮. হাই ফ্লো অক্সিজেন বা নেবুলাইজ করার সময় কাছে না থাকা।
১৯. সংক্রমণ প্রতিরোধ সম্মন্ধে জ্ঞানের কমতি থাকলে ঝুঁকি বেশি। দেখা গেছে এনেসথেসিয়া বা ক্রিটিকাল কেঁয়ার বিশেষজ্ঞ দের মধ্যে সংক্রমণ কম, বেশি সংস্পর্শে আসার পরও। কারণ তারা এই বিষয়ে বেশি জ্ঞান রাখেন।
২০. বিভিন্ন প্রসিডিওর এ বারবার ট্রেনিং ও  চেকলিস্ট ফলো করা, যেমন ডোনিং, ডোফিং, ইন্টুবেশন ইত্যাদি সংক্রমণ ঝুঁকি কমায়।
২১. জরুরি বিভাগের চিকিৎসকদের  সংক্রমণ হবার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। এখানে কাচ বা পলিথিন ফ্রেম দিয়ে ব্যারিয়ার তৈরি করা, পিপিই পড়া, ভালো মাস্ক পড়া অত্যাবশ্যক। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে রোগীর সাথে দূরত্ব নিশ্চিত করা উচিত। এখানে আসা মৃত রোগী দেখার সময় ও সাবধানতা অবলম্বন জরুরি।
২২. রক্তচাপ অটোমেটিক মেশিনে মাপা ভালো।
২৩. ডিউটি তে আসার পরই সকল আসবাবপত্র, ফ্লোর এ ব্লিচিং স্প্রে করা। বারবার হাত জীবাণুমুক্ত করা । চোখ, মুখে হাত না দেয়া, মোবাইল ব্যাবহার না করাই ভালো।
২৪. স্টাফ স্বল্পতা, মানসিক চাপ, শারীরিক ক্লান্তি ঝুঁকি বাড়াবে।
২৫. বয়স্ক, হাই প্রেশারের, হার্টের, হাঁপানি, ডায়াবেটিস, স্থূলতা ইত্যাদি থাকলে কম ঝুঁকির কাজ করতে দিতে হবে।
২৬. রোগীদের ভীড় জমতে দেয়া যাবে না। দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে।

ডা. সৈয়দ আরিফুল ইসলাম
এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য), এমডি (এনেস্থেসিওলজি- বিএসএমএমইউ),
ইএমও, ২৫০শয্যা বিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল।
শজিমেক ১৯৯৮-৯৯ইং, ২৮তম বিসিএস।

ডা. সৈয়দ আরিফুল ইসলামের আরও লেখা পড়তে নিচের লিংকে ক্লিক করুন-
🔷 মাহে রমজানে বাত ব্যাথায় করনীয়
🔷 করোনাভাইরাস-‘প্রতিরোধ-চিকিৎসা’

(লেখকের অনুমতি ছাড়া লেখা কপি করে প্রচার ও প্রকাশ করা আইনত দন্ডনীয়)

মন্তব্য করুন

Development by: webnewsdesign.com