আপডেট

x

দু’হাতের আঙ্গুলের পর এবার পাথর হওয়ার পথে নুরুল আমিনের চোখ

বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন ২০২২ | ৯:২৬ অপরাহ্ণ |

দু’হাতের আঙ্গুলের পর এবার পাথর হওয়ার পথে নুরুল আমিনের চোখ
Spread the love

প্রতিটি দিন যেন দুঃস্বপ্ন হাতের আঙ্গুল পাথর হয়ে যাওয়া নুরুল আমিনের। এবার তার হাতের রোগ ছড়িয়ে চোখে। ধীরে ধীরে কালো হয়ে যাচ্ছে চোখের ভেতরে মণির চারপাশে। হাতের আঙ্গুলের মতো পাথর হতে শুরু করেছে তার চোখ। কুল-কিনারাহীণ এখন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়নের রাজঘর গ্রামের বাসিন্দা নুরুল আমিন।

পেশায় ছিলেন একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। বিভিন্ন দোকানে খাতা, কলম সহ স্টেশনারি মালামাল পাইকারি দামে বিক্রয় করতেন। সেই ব্যবসাও বন্ধ হয়ে গেছে এক জটিল রোগে। দুই হাতের দুটি বৃদ্ধা আঙ্গুল ছাড়া পাথর হয়ে গেছে হাতের বাকি ৮ আঙ্গুল। ফলে হাতে ধরতে পারেন না কিছুই। এমন কি তার নিজের তিন কন্যা সন্তানকেও প্রাণভরে ছুয়ে আদর করতে পারেন না। অসহ্য এই যন্ত্রণায় দিন যাপন করছেন নুরুল আমিন। অর্থের অভাবে পাথর হয়ে যাওয়া আঙ্গুলের চিকিৎসাই চালাতে পারছিলেন না তিনি। এরই মাঝে যুক্ত হয়েছে নতুন যন্ত্রণা। আঙ্গুলের রোগ ছড়িয়েছে চোখে। ফলে পাথর হতে শুরু করেছে তার চোখ।

webnewsdesign.com

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজঘর গ্রামের নুরুল আমিন গত ৫ ফেব্রুয়ারী অসুস্থ হয়ে পড়েন। ধীরে ধীরে মাত্র দুই তিনদিনের ভেতরে নুরুল আমীনের দুই হাতের ৮টি আঙ্গুল পাথর হয়ে যায়। তিনি ঢাকায় পিজি হাসপাতালের রিউমাটোলজি বিভাগের প্রফেসর ডা. মো. আবু শাহীনের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন আছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন তার এই রোগটির নাম ‘রিউমাটয়েট আর্থাইসিস ভাস্যকুলাইটিস’। তার আক্রান্ত হওয়া ৮টি আঙুল কেটে ফেলতে হবে। এর চিকিৎসা খরচ অনেক বেশি। মানুষের সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। এরই মাঝে গত এপ্রিল মাসের শেষ দিকে তিনি চোখে দেখতে পারছিলেন না। ধীরে ধীরে কালো হচ্ছে তার চোখের মণির চারপাশে। চিকিৎসকরা জানায়, তার হাতের রিউমাটয়েট আর্থাইসিস ভাস্যকুলাইটিস রোগটি চোখে বিস্তৃত হচ্ছে। এনিয়ে এখন দুশ্চিন্তায় রয়েছেন নুরুল আমিন।

নুরুল আমিন জানান, আঙ্গুল গুলোতে পচন ধরছে। চিকিৎসকরা ইতিমধ্যে জানিয়েছেন বিষয়টি অত্যন্ত জটিল হওয়ায় কয়েকটি ধাপে চিকিৎসা করার পর সিদ্ধান্ত নিবেন কবে আঙুল গুলো কাঠবেন। মাসে দুইবার ঢাকায় পিজি হাসপাতালে যেতে হচ্ছে চিকিৎসা নিতে। প্রতিবারই ঢাকায় গেলে অনেক টাকা ব্যয় হচ্ছে। এরই মাঝে এই রোগ চোখে বিস্তৃত হওয়ায় আছি দুশ্চিন্তায়। চিকিৎসক চশমা দেওয়া মুটামুটি ভাল দেখি, চশমা খুলে ফেললে ঝাপসা দেখি। শুধু আঙ্গুলের চিকিৎসা চালিয়ে যেতে ৬ লক্ষ টাকা প্রয়োজন। দীর্ঘদিন যাবত কাজ-কর্ম করতে পারছিনা। তিন সন্তান, স্ত্রী ও নিজের খাবার জুটানোই কষ্টসাধ্য। জেলা প্রশাসন থেকে কিছু অর্থ সহায়তা করেছে। সাধারণ মানুষও আমাকে অর্থ সহায়তা করছে। তিনি যেন চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারেন তাই সকল স্তরের মানুষের কাছে সহায়তা কামনা করেন।

এই বিষয়ে ২৫০শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে আবাসিক চিকিৎসক ফাইজুর রহমান ফয়েজ জানান, রিউমাটয়েট আর্থাইসিস ভাস্যকুলাইটিস বিভিন্ন প্রকার আছে। এটি শরীরের বিভিন্ন স্থানে সংক্রমিত হতে পারে৷ নুরুল আমিনের হাত থেকে এই রোগটি চোখে ছড়িয়েছে। যদি সঠিক চিকিৎসা না দেওয়া হয় তাহলে শরীরের অন্যান্য অংশেও এটি ছড়িয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তিনি আরও বলেন, খুবই কম রোগীর এই রোগটি হয়। এরফলে রক্তনালিতে রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যায়। রগ গুলি একেবারে শুকিয়ে যায়। এই রোগীর চিকিৎসক ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নেই।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, সম্প্রতি জেলা প্রশাসক মহোদয় নুরুল আমিনের চিকিৎসার জন্যে ২০হাজার টাকা অর্থ সহায়তা করেছেন। উপজেলা প্রশাসন থেকে মাঝে তাকে খাদ্য সহায়তা করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মহোদয়ের তার চিকিৎসার খবরাখবর রাখছেন। নুরুল আমিনের চিকিৎসার বিষয়ে সর্বাত্মক সহায়তা করতে জেলা প্রশাসক স্যার পিজি হাসপাতালের প্রো-ভিসি স্যারের সাথে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন।

 

মন্তব্য করুন

Development by: webnewsdesign.com