আপডেট

x

তিন মাদকসেবীকে আদালতের রায়: বাবা-মায়ের সেবা, করতে হবে গাছ রোপন

শুক্রবার, ২৬ নভেম্বর ২০২১ | ৮:৪৬ অপরাহ্ণ |

তিন মাদকসেবীকে আদালতের রায়: বাবা-মায়ের সেবা, করতে হবে গাছ রোপন
Spread the love

মো. রায়হান বেপারি, মো. আবুল কাশেম ও ছেলে আনোয়ার হোসেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলার ধরখার ইউনিয়নের গুলখার গ্রামের বাসিন্দা। তিনজনই পেশায় সিএনজি চালিত অটো রিকশা চালক ও ছিলেন মাদকসেবী। এই তিন সিএনজি চালককে ২০১৯ সালে ফেব্রুয়ারী মাসে মাদক সেবন করার সময় পুলিশ হাতেনাতে গ্রেফতার করে মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় গতকাল বৃহস্পতিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত সংশোধন হওয়ার সুযোগ দিয়ে ব্যতিক্রমী রায় প্রদান করেছেন। রায়ে বাবা-মায়ের সেবা, সন্তানদেরকে স্কুলে পাঠানো, গাছ লাগানোসহ বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হয়। সফলভাবে আসামিরা সংশোধন হলে তাদেরকে মামলা থেকে চূড়ান্তভাবে অব্যাহতি দেওয়া হবে বলে আদালত জানায়।সেই সঙ্গে রায় কার্যকরের জন্য এক প্রবেশন কর্মকর্তা নিয়োগের নির্দেশনা দেওয়া হয়।

বৃহস্পতিবার (২৬ নভেম্বর) বিকালে আদালতের বিচারক মো. রাকিবুল হাসান রকি এ আদেশ দেন।

webnewsdesign.com

সংশোধনমূলক রায়ের আসামিরা হলেন-মো. হারুন বেপারির ছেলে মো. রায়হান বেপারি, হেলাল খানের ছেলে মো. আবুল কাশেম ও আব্দুল আজিজের ছেলে ছেলে আনোয়ার হোসেন। তারা সবাই উপজেলার ধরখার ইউনিয়নের গুলখার গ্রামের বাসিন্দা।

২০১৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে আখাউড়া থানায় মাদক সেবন করার অপরাধে মামলা হয়। রায়ে আদেশে উল্লেখ করা হয়, রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। আসামিদেরকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দোষী সাব্যস্ত করে দণ্ড আরোপ করা যৌক্তিক ও যথাযথ বিবেচিত হয়।

তবে নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, তিন সিএনজি চালকের বিরুদ্ধে পূর্বের কোনও মামলা নেই অর্থাৎ তারা কোনও পেশাদার অপরাধী নন। পেশায় তারা প্রত্যেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক। তাদেরকে কারাগারে পাঠানো হলে অন্য অপরাধীদের সাহচর্যে তাদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে। ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় অপরাধীকে সবক্ষেত্রেই সাজা আরোপ করা আইন সমর্থন করে না। কেননা শাস্তি দেওয়ার অন্যতম উদ্দেশ্য সংশোধন, প্রতিহিংসামূলক নয়। এক্ষেত্রে অপরাধীকে সমাজের নিজ পরিমণ্ডলে একজন প্রবেশন কর্মকর্তা নিয়মিত পর্যবেক্ষণে তার অপরাধ প্রবণতা সরিয়ে সু-প্রবৃত্তিকে ফিরিয়ে আনতে পারে।

আদালতের রায়ে উল্লেখ করা হয়, আগামী এক বছরের জন্য প্রবেশন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে থাকবেন এবং তার নির্দেশনাসমূহ মেনে চলবেন তারা। ওই সময়ে কোনও অপরাধ করবেন না, শান্তি বজায় রাখবেন, সদাচরণ করবেন। আদালত, প্রবেশন কর্মকর্তা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তলবমতে যথাসময়ে যথাস্থানে উপস্থিত হবেন। মাদক সেবন ও বিক্রয় করতে পারবেন না। মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মেলামেশা করবেন না। জুয়া, তাস, ক্যাসিনো, বাজি ইত্যাদি থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে। আসামি ধূমপান ছাড়বেন। আসামিকে মাদকবিরোধী কার্যক্রমে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রবেশনকালে প্রবেশন কর্মকর্তার নির্দেশনা মতে বিভিন্ন সভা সমাবেশে উপস্থিত হয়ে মাদক বিরোধী প্রচারণায় অংশগ্রহণ নেবেন। প্রবেশন কর্মকর্তার অনুমতি না নিয়ে পেশা ও বাসস্থান পরিবর্তন করতে পারবেন না। সবসময় আদালত স্থানীয় অধিক্ষেত্রের মধ্যে নির্দিষ্ট বাসস্থান বা পেশায় থাকতে হবে। প্রবেশনকালে আসামি পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীল হিসেবে ২০টি ফলজ, বনজ ও ওষুধি গাছ লাগাবেন। আসামিরা প্রবেশনকালে পিতামাতার দেখাশুনা করবেন এবং ভরণপোষণের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবেন। সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠানো ও উপযুক্ত পড়াশোনার বন্দোবস্ত করবেন। নিয়মিত নামাজ আদায় এবং ধর্মীয় কাজ করবেন।

আদালতের দেওয়া আদেশের কোন শর্ত লঙ্ঘন করলে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও এক হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও সাত দিনের সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। প্রবেশন কর্মকর্তাকে প্রতি তিন মাস পরপর শর্ত প্রতিপালন ও অগ্রগতি সম্পর্কে রিপোর্ট জমার নির্দেশনা দেওয়া হয়। সফলভাবে আসামিরা সংশোধন হলে তাদেরকে মামলা থেকে চূড়ান্তভাবে অব্যাহতি দেওয়া হবে।

আসামি পক্ষের আইনজীবী মো জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ রায়ের মধ্য দিয়ে সমাজে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মেসেজ পৌঁছাবে। জেলে না পাঠিয়েও যে সংশোধন করানো যায় সেটার উদাহরণ সৃষ্টি হবে। আমি এ রায়ে খুশি। আমিসহ দুই আসামির মা ও স্ত্রী লিখিত দিয়েছেন।’

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, ‘এই মামলায় আসামিদের দুই বছরের সাজা হতে পারতো। সেটা না করে তাদেরকে সংশোধনের যে রায় দেওয়া হয়েছে সেটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। যে আইনে এ রায়টি দেওয়া হয়েছে সেটির প্রচলন নেই। আমারও এটা জানা ছিল না। ইতোপূর্বে ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে এমন দৃষ্টান্তমূলক রায় হয়েছে বলে জানা নেই।’

মন্তব্য করুন

Development by: webnewsdesign.com