নোভেল করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় ডাক্তার, সেনাবাহিনী, পুলিশ ও প্রশাসনের পাশাপাশি মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে নিরলস সেবা দিয়ে যাচ্ছে আমাদের ব্যাংকার ভাই -বোন বন্ধুরা! এই ব্যাংকারদের মধ্যে অনেকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছে। তাদের ব্যাপারে মিডিয়ায়ও তেমন একটা প্রচার হয়না।
যার ফলে সরকার হয়তো এই ব্যাংকারদের চাপা কষ্ট বোবা কান্না ও আর্ত চিৎকারের আওয়াজ শুনতে পায়না, শুনলেও হয়তো তাদের ব্যাপারে এতোটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
শুধু করোনা ভাইরাস-ই নয়, রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্রাইসিস মুভমেন্টে এই ব্যাংকাররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে তারা রোদ, ঝড়, বৃষ্টি, বন্যা উপেক্ষা করে প্রতিনিয়ত আমাদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
বর্তমান সময়ে ডাক্তার নার্সসহ স্বাস্থ্য কর্মীদের সুরক্ষার জন্য যেসব পন্য বহির্বিশ্ব থেকে আমদানি করা হচ্ছে সে ক্ষেত্রেও ব্যাংকিং সেবার ভুমিকা অপরসীম ।
তাছাড়া অনলাইন ব্যাংকিং মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ও দিয়ে যাচ্ছে এই ব্যাংকাররা। জাতীয় নির্বাচন সহ যেকোনো নির্বাচনে ঈদের ছুটিতে যখন অন্যান্য পেশার লোকজন ছুটি নিয়ে চলে যায় তখন ব্যাংকাররা কিন্তু ঠিকি আমাদের সেবায় নিয়োজিত থাকে। তাদেরও তো পরিবার-পরিজন আছে, কিন্তু তারা সেই পরিবার পরিজনের চিন্তা বাদ দিয়ে আবেগকে উপেক্ষা করে বিবেকের তাড়নায় দেশের স্বার্থে মানুষের কল্যাণে সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যাংকাররা হাজারো প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে প্রতিনিয়ত অফিস করে যাচ্ছে। তাদের পেশাটা কিন্তু অত্যন্ত রিস্কি পেশা, প্রতিনিয়ত গ্রাহকদের কাছাকাছি থেকে কাজ করতে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে আমার মনে হয় সরকার তাদের প্রটেকশনের ব্যাপারে আরেকটু গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
আমি মনে করি ডাক্তারসহ অন্যান্য পেশার যোদ্ধাদের ক্ষেত্রে যতটুকু গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে ঠিক তেমনি ভাবে ব্যাংকারদের ক্ষেত্রেও সরকারের গুরুত্ব দেওয়া উচিত।কারণ তারাও কিন্তু একই যুদ্ধের সৈনিক!
গত কয়েকদিন আগে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আমার এক ব্যাংকার বন্ধুর সাথে কথা হলো, তার বুকে চেপে রাখা কষ্টের কথা শুনছিলাম কথার এক ফাঁকে আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম যে তুই যে অফিসে যাচ্ছিস পরিবারের লোকজন টেনশন করেনা? তখন সে আমাকে বললো হ্যাঁ বন্ধু টেনশন তো করেই তাদেরকে দ্বায়িত্বের কথা বলে এবং দেশের বর্তমান পরিস্থিতি মানবতার কথা বলে বুঝাতে হচ্ছে, কিন্তু সকালে যখন অফিসে যাওয়ার জন্য রওয়ানা হই তখন আমার একমাত্র ছেলে এসে হাত ধরে বলে বাবা তুমি বাইরে যেওনা বাইরে গেলে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যাবা, যখন ভাবি এই ছোট বাচ্চাটাও করোনার ভয়ে ভীত!
তখন সত্যিই অনেক খারাপ লাগে, তবুও ছেলের চেপে ধরা হাতটা ছাড়িয়ে বুকে পাথর চাপা নিয়ে বের হয়ে অফিসে যেতে হয়। প্রিয় বন্ধুটির কষ্টের কথা গুলো শুনে খারাপ-ই লাগলো।
গতকাল আমার এক ব্যাংকার ছোট ভাইয়ের সাথে কথা হলো, তাকে জিজ্ঞেস করলাম করোনা পরিস্থিতিতে তোদের কি অবস্থা সে বললো ভাই কি আর বলবো অনেক রিস্ক-এর মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে, কোনো প্রটেকশন ছাড়াই মানুষের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। বারবার বলার পর একটা পিপিই পেলাম সেটাও আবার রেইনকোটের মতো।এই অবস্থা হলে কিভাবে মানুষের সেবা দিবো বলেন? সারাক্ষণ এক অজানা আতংকের মধ্যে থাকতে হয়। ছোট ভাইটি কে-ও সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা আমার ছিলো না। এভাবেই ব্যাংকাররা দেশের ক্রান্তিলগ্নে এক অজানা আতংক ও ভয় নিয়ে আমাদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
করোনা যুদ্ধের সম্মুখ ভাগের এই যোদ্ধাদের প্রতি রইলো দোয়া ও নিরন্তর শুভ কামনা।
আল্লাহ এদেরকে হেফাজতে রাখুন, আমিন।
লেখক-
প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট
(এই লেখাটি লেখকের ব্যক্তিগত মতামত। এর দায়দায়িত্ব সম্পূর্ণ লেখকের)
Development by: webnewsdesign.com
মন্তব্য করুন