রাত পুহালেই বুধবার সকালে শুরু হচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচন। কিন্তু এখনো সন্ধ্যান মেলেনি স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু আসিফ আহমেদের। অবশেষে ‘নিখোঁজ’ স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু আসিফ আহমেদের সন্ধ্যান চেয়ে তার স্ত্রী রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর লিখিত আবেদন জানিয়েছেন। মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) বিকেলে আসিফের স্ত্রী মেহেরুন নিছা মেহেরীন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে উপ-নির্বাচনেট রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর আবেদন জানান। ওই আবেদনে আসিফের সন্ধ্যানের পাশাপাশি সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জানানো হয়।
রিটার্নিং কর্মকর্তাকে দেওয়া আবেদনে আবু আসিফ আহমেদের স্ত্রী মেহেরুন নিছা মেহেরীন উল্লেখ্য করেন, আমার স্বামী আবু আসিফ আহমেদ প্রতীক বরাদ্ধের পর থেকে আশুগঞ্জ সরাইল নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। আমরা আবু আসিফের মোটর গাড়ি প্রতীকের পক্ষে নির্বাচনী এলাকার সাধারণ ভোটারদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছিলাম। কিন্তু গত ২৭ জানুয়ারি (শুক্রবার) বিকেলে আমার স্বামী বাসা থেকে বেরিয়ে গিয়ে এখন পর্যন্ত ফিরে আসেনি। এর পর থেকে আজ পর্যন্ত তাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ওইদিন আমি ঢাকায় ছিলাম। বাসার লোকজন জানায়, শুক্রবার বিকেলে তিনি মোবাইল ফোন বাসায় রেখে বেরিয়ে আর বাসায় ফেরেনি। তিনি কোথায় এবং কী অবস্থায় আছেন- আমরা তা বুঝতে পারছি না।
‘এর আগে গত ২৫ জানুয়ারি (বুধবার) আমার স্বামী আবু আসিফের নির্বাচনী প্রচারণাপ্রধান আবু মুসা মিয়াকে ডিবি পুলিশ উঠিয়ে নিয়ে যায়। তিনি একজন ৮০ বছর বয়সী বৃদ্ধ মানুষ ও এলাকার স্বনামধন্য সালিশকারক। পরে জানতে পারি গ্রাম্য ঝগড়ার মীমাংসিত ঘটনার মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাকে জেল হাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ। অথচ উক্ত ঘটনার সাথে তার দূরতম সম্পর্কও নেই। ওই দিন থেকে নির্বাচনী প্রচারণার সমন্বয়ক আমার ছোট ভাই শাফায়াত সুমন ভয় ভীতির কারণে নির্বাচনী এলাকায় আসতে পারছে না।’
‘এরই মধ্যে আমদের বাড়িতে পুলিশের পরিচয় দিয়ে সাদা পোষাকধারী লোকজন এসে অযথা তল্লাশি করে হয়রানি করেছে। প্রতিনিয়ত আমাদেরকে কর্মী সমর্থকদের হুমকি-ধামকি দেওয়া হচ্ছে। বাড়ির সামনেও কিছু পুলিশ আসা যাওয়া করছে। বাসায় যেন কোনো লোক আসতে পারে না সেজন্য কয়েকজন লোক বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। কাজের লোক এলেও ছবি তুলে রাখে, ভিডিও করে রাখে।’
তিনি আরও উল্লেখ করেন, এছাড়া প্রচারণার ক্ষেত্রেও আমরা কোন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড পায়নি। ভোট কেন্দ্রে যাদেরকে এজেন্ট দেবো তাদেরকেও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। একজন প্রার্থীকে যেভাবেই হোক জিতিয়ে নেয়া হবে বলে প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে। এ অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলে আমরা মনে করিনা। আমরা বিশ্বাস করি এতকিছুর পরও সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট হলে আমার স্বামী আবু আসিফ আহমেদ বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে।
তিনি অভিযোগ করেন, আমাদের দৃষ্টিতে সরাইল উপজেলা কুট্টাপাড়া পূর্ব, কুট্টাপাড়া পশ্চিম, সৈয়দটুলা, পরের পাড়, আবিথটুলা, সরাইল অন্নদা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় ও উচালিয়া সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রগুলো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ভোটারদের আঙ্গুলের চাপ নেয়ার পর বিশেষ প্রার্থীকে জিতানোর জন্য অন্যরা প্রতীকের বাটন চেপে দেবে বলে একটি মহল এলাকায় প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।
অভিএমতাবস্থায় ভয়ে আমরা এ পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ করতে পারিনি। কিছু সংখ্যক সংবাদকর্মী স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আমার বাসায় আসলে আমি তাদেরকে বিষয়টি অবহিত করি। এরপর এ বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে নির্বাচন কমিশন থেকে আমার স্বামীকে খুঁজে বের করাসহ তদন্তের নির্দেশ এসেছে বলে আমরা জানতে পারি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক ও উপনির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহগীর আলম বিকেল সোয়া ৫টার দিকে সাংবাদিকদের জানান,’ এখন থেকে এক ঘন্টা আগে আমরা আসিফের নিখোঁজের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে। আমরা এই বিষয়ে কাজ করছি।’
উল্লেখ্য, ১ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনের উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিক হবে। এতে ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। এরা হলেন- বিএনপির বহিস্কৃত ৫ বারের সাবেক সাংসদ আব্দুস সাত্তার ভূইয়া, জাতীয় পার্টির প্রার্থী আব্দুল হামিদ ভাষানী, সাবেক এমপি জিয়াউল হক মৃধা, জাকের পার্টির জহিরুল ইসলাম জুয়েল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু আসিফ আহমেদ। এরমধ্যে জিয়াউল হক মৃধা প্রতীক বরাদ্দের পর বিবৃতি দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। এছাড়া এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ না করলেও উকিল আব্দুস সাত্তার ভূইয়া সমর্থক গোষ্ঠির ব্যানারের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, এমপিরা, জেলা ও উপজেলার নেতারা আব্দুস সাত্তার ভূইয়ার পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
Development by: webnewsdesign.com
মন্তব্য করুন