আপডেট

x

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জেলা প্রশাসনের গণশুনানি, দুর্ভোগের কথা বললেন সরকারি কর্তারাও

বৃহস্পতিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ১১:১৫ অপরাহ্ণ |

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জেলা প্রশাসনের গণশুনানি, দুর্ভোগের কথা বললেন সরকারি কর্তারাও
Spread the love

‘ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্যে ট্রেন ধরতে পুলিশের গাড়ি থেকে নামার পরই পরই দু’তিন জন এসে জানতে চায় টিকিট লাগবে কিনা। ঢাকা থেকে ফিরে ডিবি পুলিশকে দিয়ে অভিযান চালিয়ে তিনজন টিকিট কালোবাজারিকে গ্রেপ্তার করাই। গোয়েন্দা পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে এ স্টেশনে বুকিং সহকারি বদলি হয়ে আসতে ১৬ লাখ টাকা লেগেছে।’ এমন তথ্য তুলে ধরেছেন খুদ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোল্লা মোহাম্মদ শাহীন।

বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জেলা প্রশাসনের আয়োজনে গেল এক গণশুনানি এই তথ্য জানান তিনি। সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসন এ গণশুনানির আয়োজন করে। ডিস্ট্রিক পলিসি ফোরামের সহযোগিতায় গণশুনানিতে উপস্থিত বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা অভিযোগের বিষয়ে নিজেদের ব্যাখা দেন ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস প্রদান করেন। একাধিক সরকারি কর্মকর্তা নিজেরাও যে কখনো কখনো দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন সেই চিত্র তুলে ধরেন। উঠে আসে গণদুর্ভোগের শতকথা। কেউ অভিযোগ আনলেন ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির। কেউবা হাসপাতালের চরম অব্যবস্থাপনা ও দুর্ভোগের চিত্র তুলে ধরলেন। ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে দালাল ধরার বাধ্যবাধকতার অভিযোগও উঠে আসে। পাসপোর্ট অফিসে কাগজপত্র নিয়ে হয়রানি, পাসপোর্টের পুলিশ ভেরিফিকেশন করতে গিয়ে হয়রানির অভিযোগও করা হয়। ডিস্ট্রিক পলিসি ফোরামের সভাপতি মো. আরজু’র সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম।

webnewsdesign.com

গণশুনানিতে ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্য সেবার জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসক না থাকার অভিযোগ আনেন মাইটিভি’র প্রতিনিধি সাংবাদিক আ ফ ম কাউছার এমরান ও প্রথম আলো’র নিজস্ব প্রতিবেদক মো. শাহাদাৎ হোসেন। দলিল করতে গিয়ে অতিরিক্ত টাকা দিতে হয় বলে অভিযোগ আনেন শাহাদাৎ হোসেন। বাংলাটিভি’র প্রতিনিধি সাংবাদিক আল-আমীন শাহীন তাঁর বক্তব্যে কর্তা ব্যক্তিরা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে শুদ্ধি অভিযান চালান কি-না এ প্রশ্ন তোলেন।

খায়রুল ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘প্রয়োজন না থাকলেও ভেরিফাইড এনআইডি কপি চাওয়া হয় পাসপোর্ট অফিসে। না দেওয়া আবেদন জমা রাখা হয়নি। পুলিশ ভেরিফিরেকশন বাড়িতে এসে করার কথা থাকলেও তাকে ডেকে অন্য কোথাও এনে টাকা চাওয়া হয়।’

জাগোনিউজের জেলা প্রতিনিধি আবুল হাসনাত মো. রাফি অভিযোগ করেন, বিআরটিএ থেকে লাইসেন্সে পেতে হলে দালাল ছাড়া উপায় থাকে না। মোস্তাকিন ও আহসান নামে দু’জন নিজেদেরকে ওই অফিসের কর্মচারি পরিচয় দিয়ে মানুষের কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায় করেন।

খেলাঘর ব্রাহ্মণবাড়িয়া শাখার সাধারন সম্পাদক নীহার রঞ্জন সরকার বলেন, ‘প্রাইভেট ক্লিনিকে অভিযান হলেও সদর হাসপাতালে হয় না। হাসপাতালে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশসহ নানা অব্যবস্থাপনা বিরাজমান। চিকিৎসকরা অফিস সময়েও প্রাইভেট প্র্যাকটিস করেন।’

পিফরডি সদস্য মাহবুব খান বাবুল,হাসিনা আক্তার,সোহেল রানা তাঁদের বক্তব্যে টিকিট সংকট ও কালোবাজারি নিয়ে অভিযোগ আনেন। কাউন্টারে মুহুর্তেই কিভাবে আন্তনগর ট্রেনের কয়েকশ’ টিকিট কিভাবে শেষ হয়ে যায় এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন। সমাজ সেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালকও ট্রেনের টিকিট নিয়ে অভিযোগ তুলেন।

বিশেষ অতিথি’র বক্তব্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবের সাধারন সম্পাদক জাবেদ রহিম বিজন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়েও যেহেতু টিকিট কালোবাজারি বন্ধ হয়নি সেহেতু বুঝতে হবে সমস্যাটা প্রকট।’ প্রত্যেক অফিসের কর্মকর্তাদেরকে নিজ নিজ জায়গা থেকে সঠিক দায়িত্ব পালনের উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘চাহিদার চেয়ে কম আসন বরাদ্দ হওয়ায় টিকিট কালোবাজারিরা সুযোগ নেয়। আইনশৃংখলা বাহিনীর সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ হতে হবে।’

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য দেওয়া ডা. মাহমুদুল হাসান জেলা সদর হাসপাতালে লোকবল সংকট রয়েছে বলে উল্লেখ করেন।

বিআরটিএ’র কর্মকর্তা জানান, তাঁর কার্যালয়ে মোস্তাকিন ও আহসান নামে কেউ নেই। অভিযোগ বিষয়ে খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান তিনি। জেলা রেজিস্ট্রার তাঁর বক্তব্যে দলিল করতে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার বিষয়টি খোঁজ নিয়ে জেনে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।

জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম বলেন,‘রাতারাতি অবস্থার পরিবর্তন করতে পারবো এমন অবস্থানে আমরা পৌঁছতে পারিনি। তবে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। পাঁচ থেকে ১২ বছর পর্যন্ত একইস্থানে চাকরি করছেন এমন ৫৬ জন ইউনিয়ন পরিষদ সচিবকে বদলি করা হয়েছে। ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির বিষয়টি বাস্তব সত্য। আইনশৃংখলা সভায়ও এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। শিগগিরই এটা ভালো ফলাফল আশা করতে পারি।’

মন্তব্য করুন

Development by: webnewsdesign.com