ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার রামরাইল ইউনিয়নের উলচাপাড়া গ্রাম। এই গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আনোয়ারুল ইসলাম ওরফে দারু মিয়া ছিলেন ফুটবল প্রেমী। আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের ছিলেন অন্ধ ভক্ত। তিনি মারা গেছেন ২০১৯ সালে জানুয়ারি মাসে৷ তিনি না থাকলেও এইবছর ফুটবল বিশ্বকাপে তার স্মৃতি ধরে রাখতে আর্জেন্টাইন দলের পতাকার রঙে বসত ঘর রাঙিয়েছেন তার ৩ ছেলে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানী শেখ আনোয়ারুল ইসলাম ওরফে দারু মিয়া ছিলেন আর্জেন্টাইন ফুটবল দলের অন্ধ ভক্ত। আর্জেন্টাইন ফুটবল দলের প্রতি তার এই ভালবাসার কথা এলাকার সবাই জানেন। ৯ ছেলে ও এক মেয়ে রেখে ফুটবল প্রেমী এই মুক্তিযোদ্ধা ইহকালের মায়া ত্যাগ করে চলে যান ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে। দরজায় কড়া নাড়ছে ২০২২ বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর। ২০১৮ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ ফূটবল পরিবারের সবাইকে নিয়ে উপভোগ করেছিলেন প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আনোয়ারুল ইসলাম। কিন্তু এবছর বিশ্বকাপে পিতার শূন্যতা অনুভব করছেন তার সন্তানরা।বিশ্বকাপ উপলক্ষে পিতার প্রতি ভালবাসায় তার পছন্দের দল আর্জেন্টিনার প্রতাকার আদলে নিজের বসতঘর রঙ করেছেন ছোট তিন ছেলে।
প্রয়াত আনারুল ইসলাম ৯ ছেলেকেই সুশিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। ৯ ছেলে এখনো এক সাথেই আছেন। এরমধ্যে ৬ ছেলে জীবিকার তাগিদে দেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মরত আছেন। বাড়িতে রয়েছেন ছোট তিন ছেলে শেখ তাজিম উদ্দিন আহমেদ (২৮), শেখ তারেক আহমেদ (২৬) ও শেখ রোহান উদ্দিন (২৩)। ছোট তিন ছেলের উদ্যোগে বাড়ি রাঙিয়েছেন আর্জেন্টিনার পতাকার রঙে।
প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আনোয়ারুল ইসলামের ৮ম ছেলে শেখ তারেক আহমেদ বলেন, ‘আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের প্রতি আমাদের অগাধ ভালবাসা। এই ভালবাসা সেই ছোট বেলা থেকে। যখন আমরা ছোট ছিলাম, আব্বার রাত ৩টায় আমাদের পরিবারের সবাইকে আর্জেন্টিনার ফুটবল খেলা টিভিতে দেখতে ঘুম থেকে ডেকে তুলতেন। আমার আব্বা ছিলেন আর্জেন্টিনার অন্ধ ভক্ত। তখন থেকেই দলটির প্রতি আমাদের ভালবাসা তৈরি হয়েছিল। এখন আমার আব্বা নেই, আব্বার ভালবাসা এবং আব্বার প্রতি সম্মান জানিয়ে আর্জেন্টিনার পতাকার আদলে বসতঘর রঙ করেছি।’
তার ৭ম ছেলে শেখ তাজিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের বসতঘরটিতে শয়ন কক্ষ রয়েছে ৫টি। যার পরিমাণ ১০৮০ স্কয়ার ফিট হবে। গত এক সপ্তাহে ৮জন মিস্ত্রীসহ আমরা তিন ভাই এই রঙের কাজ করেছি। ব্যয় হয়েছে ২০ হাজার টাকা। তিনি বলেন, আমি এবং আমার পরিবারের সবাই আর্জেন্টিনার ভক্ত। আমার পিতা ছিলেন এই দলের অন্ধ ভক্ত। বাবার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে, বাবার প্রিয় দল আর্জেন্টাইন পতাকার মত রঙ করেছি।
স্থানীয় বাসিন্দা শেখ ওয়াসিম বলেন, ‘সকালে সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় দেখলাম তারা ঘর রঙ করেছেন। তাদের বাবা ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় বাজারের সেক্রেটারি। তিনিও ছিলেন আর্জেন্টিনার অনেক ভক্ত। তার ৯ ছেলেও আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের ভক্ত, আমিও এই দলের সাপোর্টার। খেলা আসলে আমরা অনেক উল্লাসে মেতে উঠি। তাদের ঘর রঙ করার বিষয়টি এলাকায় আলোড়ন তৈরি করেছে।’
স্থানীয় সাবেক ওয়ার্ড মেম্বার হুমায়ূন কবির বলেন, ‘তারা ঘরটি আর্জেন্টিনার পতাকার রঙ করায় খুব সুন্দর দেখাচ্ছে। তাদের বাবা ছিলেন আমার সম্পর্কে চাচা হন। তিনি আর্জেন্টিনার ভক্ত ছিলেন। আমিও এই দলের ভক্ত। আমি তাদের ঘর রঙ করার সময় উৎসাহ দিয়েছি।’
Development by: webnewsdesign.com
মন্তব্য করুন