আপডেট

x

বিপদে অসহায় দেশের পাশে দাঁড়ানো তুরস্ক আজ নিজেই মহাবিপদে

সোমবার, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ৯:৪৩ অপরাহ্ণ |

বিপদে অসহায় দেশের পাশে দাঁড়ানো তুরস্ক আজ নিজেই মহাবিপদে
Spread the love

বিশ্বের যেকোনও দুর্যোগ দেখা দিলে দুহাত বাড়িয়ে দেয় মুসলিম বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর ও প্রভাবশালী দেশ তুরস্ক। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া মানবিক এই দেশটি এখন ক্রান্তিলগ্নে। দীর্ঘ ৮৪ বছর পর দেশটি আবারও ভয়াবহ ভূমিকম্পের শিকার হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় দুই হাজারের বেশি মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। আহত হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। দুর্যোগে বিশ্বের পাশে দাঁড়ানো তুরস্কই আজ আন্তর্জাতিক সাহায্য প্রার্থনা করেছে।

তুরস্ক ও সিরিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা ভয়াবহ ভূমিকম্পে ধ্বংস্তুপে পরিণত হয়েছে। ধসে পড়েছে হাজার হাজার বহুতল ভবন। ক্ষণে ক্ষণে উদ্ধার করা হচ্ছে মৃতদেহ ও আহতদের। এই সংখ্যা দ্রুত গতিতে বাড়ছে।

webnewsdesign.com

হাসপাতাল ও ধসে পড়া ভবনগুলোর সামনে স্বজনদের খুঁজতে ভিড় করছেন সাধারণ মানুষ। সোমবার ভোররাতের এই ভূমিকম্পের সময় বেশিরভাগ মানুষই ঘুমিয়ে ছিলেন। তুরস্ক ও সিরিয়া উভয় দেশেই বিপুল ক্ষতি হয়েছে। এখনও ধসে পড়া ভবনের নিচে আটকে রয়েছেন বহু মানুষ। তাদেরকে উদ্ধারে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট দেশের বাহিনী। ৯ হাজার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য এই কাজে যুক্ত হয়েছেন। সাধারণ মানুষও এতে হাত লাগিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের জিওলজিক্যাল সার্ভে অনুমান করে বলেছে যে, এই ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা দশ হাজার ছাড়তে পারে। তুরস্ক প্রশাসন ইতিমধ্যে জানিয়েছে, ভূমিকম্পে প্রায় তিন হাজার ভবন ধসে পড়েছে।

ভূমিকম্পের বিষয়ে এক ব্রিফিংয়ে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেছেন, ১৯৩৯ সালের ভূমিকম্পের পর এটি সবচেয়ে বড় বিপর্যয়।

তুরস্কের দুর্যোগ এবং জরুরী ব্যবস্থাপনা প্রেসিডেন্সি (এএফএডি) জানিয়েছে, স্থানীয় সময় সোমবার ভোররাতে ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। যদিও মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা জানিয়েছে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭.৮। এরপর অন্তত ৭৮টি আফটারশক হয়েছে। এএফএডি জানিয়েছে, স্থানীয় সময় দুপুরে তুরস্কের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে আবারও ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা জানিয়েছে, এই ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা ১০ হাজার থেকে ১ লাখ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ২০ শতাংশ। মিনিটে মিনিটে বাড়ছে মৃত্যু। উদ্ধার হচ্ছে মৃতদেহ। অনেক পরিবারে কেউ বেঁচে নেই।

পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের ভয়াবহ বন্যায় উদ্ধারকারী, জরুরি ওষুধ ও খাদ্যপণ্যসহ নানা জিনিস নিয়ে পৌঁছে তুরস্ক। পাকিস্তানের বেলুচিস্তানের এক অজপাড়া গাঁয়েও পৌঁছে যান তুরস্কের রেড ক্রিসেন্ট কর্মীরা।

প্রতিবেশী চার দেশের নিষেধাজ্ঞায় যখন অথই সাগরে পড়েছিল কাতার, তখন তাদেরকে একাই টেনে তুলেছিল তুরস্ক। তাৎক্ষণিকভাবে যাবতীয় সহযোগিতা নিয়ে কাতারের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।

২০২২ সালে ফেব্রুয়ারি থেকে রুশ হামলার শিকার হয়েছে ইউক্রেন। দেশটিতে প্রচুর মানবিক সহযোগিতার প্রয়োজন পড়েছে। ন্যাটোর অন্যতম সদস্য তুরস্ক রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার পরও ইউক্রেনে সাহায্য নিয়ে পৌঁছে যায়।

সেই তুরস্ক আজ বড় বিপদে। হাজার হাজার মানুষ ধসে যাওয়া ভবনের নিচে আটকা পড়েছে। হঠাৎ করে হওয়া এমন মহাদুর্যোগে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কামনা করেছে তুরস্ক। সাড়াও মিলেছে ব্যাপক।

প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান জানিয়েছেন, ‘আন্তর্জাতিক সাহায্যের জন্য আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে ন্যাটো এবং ইইউ এর সহায়তার প্রস্তাব ছাড়াও ৪৫টি দেশ আমাদের সহযোগিতা করতে চেয়েছে।’

তুরস্ককে তাৎক্ষণিক সহযোগিতার প্রস্তাব দেওয়া দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে, সৌদি আরব, ইরান, রাশিয়া, কাতার, ইউক্রেন, ভারত, ইসরায়েল। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন অন্তত দশটি টিম এরই মধ্যে প্রেরণ করেছে।

মন্তব্য করুন

Development by: webnewsdesign.com