সরাইলে ধর্ষণে সন্তান জন্ম দিল প্রতিবন্ধী

বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০১৯ | ৮:৫১ অপরাহ্ণ |

সরাইলে ধর্ষণে সন্তান জন্ম দিল প্রতিবন্ধী
Spread the love

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে ধর্ষণে সন্তানের মা হলেন এক শারীরিক প্রতিবন্ধী মেয়ে। উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের বুড্ডা গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। অভিযুক্ত ধর্ষককে রক্ষা করতে সালিশে পাঁচ লাখ টাকা রফাদফা করেছেন। এতে ঘটনা ধামাচাপা দিতে নবজাতক সন্তান সহ ওই প্রতিবন্ধী মেয়েটিকে গ্রামের বাইরে রেখেছেন সালিশকারক ব্যক্তিরা।

বুড্ডা গ্রামের স্থানীয়রা জানান, হিন্দু সম্প্রদায়ের দরিদ্র পরিবারের ওই শারিরীক প্রতিবন্ধী মেয়ে রাষ্ট্রীয় ভাতাভোগী। গত দেড় বছর আগে তার মা মারা গেছেন। তার বাবা শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে এখন শয্যাশায়ী। মেয়েটির মা যতদিন বেঁচে ছিলেন, ততদিন মেয়েটির সবকিছুর খোঁজখবর রাখতেন। সম্প্রতি বুড্ডা গ্রামের পরিমল চন্দ্র দাসের বখাটে ছেলে বিষ্ণু চন্দ্র দাস ওই প্রতিবন্ধী মেয়েকে বিয়ের প্রলোভনে একাধিকবার ধর্ষণ করে। এতে ওই প্রতিবন্ধী মেয়ে অন্তসত্ত্বা হয়ে পড়ে।

webnewsdesign.com

বুড্ডা গ্রামের পল্লী চিকিৎসক শেম্বু রাম দাস বলেন, গত শুক্রবার (৮ নভেম্বর) সকালে সেই প্রতিবন্ধী মেয়েটিকে তার মাসী আমার চেম্বারে নিয়ে আসে। তখন তার পেট ফুলা ও প্রচন্ড ব্যাথায় কাঁদছিল। তার স্বজনদের অনুরোধে আমি মেয়েটিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে অভিজ্ঞ একজন চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যায়। সেখানে এক নারী চিকিৎসক মেয়েটির পেটে আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিনের সাহায্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে জানান, “প্রতিবন্ধী এই মেয়ের গর্ভে সন্তান। বয়স ৪০ সপ্তাহ। আগামিকাল তার বাচ্চা প্রসবের সম্ভাবনা রয়েছে।” চিকিৎসকের মুখে এ কথা শুনে আমরা অবাক হয়। কুমারি মেয়ের পেটে বাচ্চা। তাৎক্ষণিক মেয়েটির কাছে গর্ভের সন্তানের বাবার পরিচয় জানতে চাইলে, প্রতিবন্ধী মেয়ে জানায়, বিষ্ণু দাস তাকে প্রায়ই ধর্ষণ করতো। তাকে বিয়ে করার আশ্বাসও দিয়েছিল। পরে বিষয়টি তার পরিবার ও স্বজনদের জানানো হয়। শনিবার মেয়েটি একটি সন্তান প্রসব করেছে বলে জেনেছি।

বুড্ডা গ্রামের আবু তাহের, শামীম মিয়া, নয়ন দাস সহ অনেকে জানান, শনিবার ওই প্রতিবন্ধী কুমারি মেয়ের সন্তান প্রসব হয়। অভিযুক্ত বিষ্ণু দাসকে বাঁচাতে বিষয়টি নিয়ে ঘরোয়া সালিশ করেন বুড্ডা গ্রামের সর্দার অখিল চন্দ্র দাস ও নান্টু চন্দ্র দাসের নেতৃত্বে কয়েকজন। প্রতিবন্ধী মেয়েকে বিয়ে করতে অস্বীকার করায় উপস্থিত সালিশকারকরা ধর্ষক বিষ্ণু দাসকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করেন। সোমবার জরিমানার দুই লাখ টাকা পরিশোধ করে ধর্ষক বিষ্ণুর পরিবার। জরিমানার এই টাকা সেই সালিশের উদ্যোক্তা দিপু চন্দ্র দাসের কাছে জমা আছে। বাকি তিন লাখ টাকা পরিশোধে তারা সময় নিয়েছে।

প্রতিবন্ধী মেয়েটির অসুস্থ বাবা সাংবাদিকদের জানান, আমার মা মরা মেয়ের কি হয়েছে আমি এর কিছুই বুঝতেছি না। আমাদের সমাজের সর্দার অখিল দাস ও নান্টু দাস আমাকে বলেছে, “আমার প্রতিবন্ধী মেয়ের পেটে টিউমার হয়েছে। আমি যেন সবাইকে এই কথাই বলি। বাকিটা তারা দেখতেছেন।”

মেয়েটির বাবা আরো বলেন, আমার মেয়েটি এখন তাদের হেফাজতে আছে। কি অবস্থায় আছে, আমি এর কিছুই জানি না।

এ ব্যাপারে জানতে অভিযুক্ত বিষ্ণু দাসের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। এলাকায় সাংবাদিক এসেছে জেনে তারা গাঢাকা দিয়েছে বলে প্রতিবেশী লোকজন জানান। সর্দার নান্টু দাসের বাড়িতে গিয়ে তাকেও পাওয়া যায়নি। সালিশকারক অখিল দাস দাবি করেন, তিনি এসব বিষয়ে কিছুই জানেন না। দিপু দাস বলেন, ওই প্রতিবন্ধী মেয়ের পেটে বাচ্চা নয়, টিউমার হয়েছে। বিষ্ণু দাসের দেওয়া টাকায় মেয়েটির চিকিৎসা চলছে।

মন্তব্য করুন

Development by: webnewsdesign.com