আপডেট

x

ভারতে এমএলএ যদি রেশন নিতে পারে, আমরা নিলে দোষ কি?-কৃষকলীগ সেক্রেটারি

বুধবার, ১৩ মে ২০২০ | ২:৫১ অপরাহ্ণ |

ভারতে এমএলএ যদি রেশন নিতে পারে, আমরা নিলে দোষ কি?-কৃষকলীগ সেক্রেটারি
Spread the love

করোনা ভাইরাসের প্রভাবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ভিক্ষুক ও ভবঘুরেসহ হতদরিদ্র এবং নিম্নআয়ের মানুষ, যারা কোনো সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর অন্তর্ভুক্ত নয়; তাদের জন্য বিশেষ ওএমএস সুবিধা চালু করা হয়েছে। এই সুবিধায় একজন ওএমএস কার্ডধারী প্রতি মাসে ১০ টাকা কেজি দরে ২০ কেজি করে চাল পাবেন।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সেজন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা এলাকায় নয় হাজার ৬০০ জনকে দেয়া হচ্ছে ওএমএস কার্ড। কার্ডের জন্য প্রথম দফায় প্রতিটি ওয়ার্ডে ৫০০জনের তালিকা তৈরি করা হয়। ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মাধ্যমে এ তালিকা করা হয়েছে। প্রথম দফার তালিকা অনুযায়ী ইতোমধ্যে ১০ টাকা কেজি দরে ২০ কেজি করে চাল পেয়েছেন তারা।

webnewsdesign.com

এরই মাঝে এই তালিকা নিয়ে ডিলার ও ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে নানান অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। জেলা আওয়ামী লীগ, জেলা কৃষকলীগ, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও বিত্তবানদের নামও দেয়া হয়েছে ওএমএস কার্ডের তালিকায়। পৌরসভার মাধ্যমে পাওয়া তালিকা থেকে মোট ৯১ জন সামর্থ্যবানের নাম বাদ দেয়ার জন্য বলেছে জেলা ওএমএস কমিটি। ইতিমধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার ১০নং ওয়ার্ডে ওএমএস ডিলার শাহ আলমকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে।

এদিকে গোপন সূত্র পাওয়া ওই তালিকায় দেখা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার ১০নং ওয়ার্ডে জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক, জেলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক শাহ আলমের স্ত্রী মোছাম্মৎ মমতাজ আলম, মেয়ে আফরোজা, ভাই মো. সেলিম (পরিবহন শ্রমিক নেতা), ভাই মো. আলমগীর, বোন শামসুন্নাহার, ভাইয়ের ছেলে প্রবাসী নাছির, শ্যালক তাজুল ইসলাম, শ্যালক শফিকুল ইসলাম, আরেক শ্যালকের স্ত্রী জান্নাতুল ইসলাম, বোনের তিন দেবর মতিউর রহমান, মাহবুবুর রহমান ও লুৎফুর রহমানের নাম রয়েছে। ওই ওয়ার্ডের ডিলার শাহ আলম নিজেই।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার ১২নং ওয়ার্ডের ভোক্তা কার্ড নং-৪৮৮ এ জেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন দুলাল, কার্ড নং-১৯ এ ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি হারুন অর রশিদ সহ প্রবাসী, এমপিও ভুক্ত শিক্ষক, কনফেশনারীর মালিক, দুই/তিনতলা ভবনের মালিকের নাম ওই তালিকা রয়েছে। ১২নং ওয়ার্ডের এমন ১৯জনের নাম তালিকা থেকে বাদ দিতে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।

এবিষয়ে জানতে ৪৮৮ ভোক্তা কার্ড নম্বর কার্ডধারী জেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন দুলালের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,” আমি নেতা হয়েছি কি হইছে? ভারতের এমএলএ যদি রেশন নিতে পারে, তাহলে আমি নিলে দোষ কি?” তার এই উত্তরের পরিপ্রেক্ষিতে আপনি যদি ওএমএস নেওয়ার উপযুক্ত হন, তাহলে কমিটির আপনার নাম বাদ দিতে কেন সুপারিশ করলো? এই প্রশ্ন করা হলে তিনি মুঠোফোনের সংযোগ কেটে দেন।

৭ নম্বর ওয়ার্ডের তালিকায় ৩৭৭নং কার্ডধারী নাজির মিয়া দুই কোটি টাকার মালিক, ২৩নং কার্ডধারী বজলু মিয়ার এক ছেলে সৌদি প্রবাসী ও এক ছেলে ইতালি, ১৫নং কার্ডধারী কবির মিয়া শহরের বড় কাপড় ব্যবসায়ী, ৪৭৪নং কার্ডধারী নূরুল আলমের দোতলা বাড়ির তৃতীয় তলার কাজ চলমান।

৮ নম্বর ওয়ার্ডে দোতলা বাড়ি আছে এমন পাঁচজন—১নং কার্ডধারী কিতাব আলী, ৪৩৩নং জীবন সাহা, ৪৫৮নং নেরোজ আলী, ৪৫৮নং সাকিল ও ২৪৩নং উপল মালাকারের নাম উঠেছে। এ ছাড়া ওই ওয়ার্ডের বাসিন্দা আব্দুর রউফের দুই ছেলে প্রবাসে থাকলেও তালিকায় নাম রয়েছে।

৯ নম্বর ওয়ার্ডে জহির আহমেদ খান ও শাহাদাৎ হোসেন খান সচ্ছল। ২ নম্বর ওয়ার্ডে মুজিবুর রহমান, অরূপ চন্দ্র মোদক, নারায়ণ বণিক, ইন্দ্রজিৎ বণিক, বিশ্বজিৎ পালের রয়েছে বহুতল ভবন। রয়েছে স্বামী সুবীর নাথ ও স্ত্রী স্বপ্না রানীর নাম। এদিকে ৩ নম্বর ওয়ার্ডে আবু তাহেরের ছেলে আবু বাকের পাঁচতলা ভবনের মালিক। ৫ নম্বর ওয়ার্ডে নাছিমা চৌধুরী ও আবু জামাল ভূঁইয়া দ্বিতল ভবনের মালিক। ৪ নম্বর ওয়ার্ডে তিনতলা বাড়ির মালিক সুধীর দাস, বেসরকারি চাকুরে সৈকত করের নাম রয়েছে। ডিসি অফিসের কর্মচারী কাজল চন্দ্র বিশ্বাসের নাম আছে।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুবীর নাথ চৌধুরী বলেন, ওএমএস কার্ডের তালিকায় সামর্থ্যবানদের নাম ওঠার বিষয়টি জেলা ওএমএস কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে। ওই সভায় ৯১ জন সামর্থ্যবানকে চিহ্নিত করে তাদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার জন্য পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছেন জেলা প্রশাসন।

মন্তব্য করুন

Development by: webnewsdesign.com