বিএনপি নেতা,সাবেক প্রতিমন্ত্রী হারুন আল রশীদের বাড়ির সীমানা প্রাচীর গুড়িয়ে দিয়েছে দুবৃত্বরা (ভিডিও)

বুধবার, ১৪ আগস্ট ২০১৯ | ৮:৫৮ অপরাহ্ণ |

Spread the love

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রাতের আঁধারে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে বুলডোজার দিয়ে বিএনপির সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও পাঁচ বারের সাবেক সাংসদ হারুণ আল রশিদের জায়গায় থাকা মডার্ণ এক্স-রে ও প্যাথলজি ক্লিনিকের সীমানা প্রাচীর ও স্থাপনা গুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। করাত দিয়ে বাড়ির ভেতরের গাছও কেটে ফেলা হয়। গত মঙ্গলবার দিনগত রাত দুইটা থেকে ভোররাত সকাল সাতটা পর্যন্ত এ তান্ডব চালানো হয়ে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালের প্রধান ফটক থেকে প্রায় ৩০-৪০ ফুট দূরত্বে এক সময় বিএনপির নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও পাঁচ বারের সাবেক সাংসদ হারুণ আল রশিদের এই বাড়ির মালিক। বর্তমানে ওই বাড়িটি ভাড়া নিয়ে মডার্ণ এক্স-রে ও প্যাথলজি ক্লিনিক নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অবস্থিত। ক্লিনিক মালিক আজিজুল হক জায়গাটি কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতা হারুণ অর রশিদের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে ২০-২৫ বছর ধরে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন।

webnewsdesign.com

এঘটনায় শহরের সর্বস্থরের মানুষের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। শহরের বিভিন্ন স্থরের লোকজন ঘটনাস্থল পরির্দশন করেছেন। সকাল ১০টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। জেলা বিএনপির সভাপতি সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক, যুগ্ম সাধারণ সাধারণ সম্পাদক এ বি এমন মমিনুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুল ইসলামও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) রেজাউল কবীর সাংবাদিকদের বলেন, সকালে ভাঙচুরের ঘটনাটি শুনেছি। সদর থানার ওসিকে ঘটনাস্থল পরির্দশন করতে বলেছি। হাসপাতাল মালিকপক্ষ রাতে ভাঙচুর প্রসঙ্গে পুলিশকে অবগত করলে কেউ আসেনি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রত্যক্ষদর্শী ও ক্লিনিকের লোকজন জানান, মডার্ণ এক্স-রে ও প্যাথলজি ক্লিনিকের পশ্চিম দিকে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মো. জাকারিয়া ও মনির হোসেন, শহর যুবলীগের আহবায়ক আমজাদ হোসেন রনি, শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহবায়ক শফিকুল ইসলাম, ব্যবসায়ি উবায়দুল হকসহ বেশ কয়েকজন মিলে প্রায় ৪৮শতক জায়গা কিনেছেন। সেখানে ডা. জাকারিয়া মা ও শিশু জেনারেল হসপিটাল নির্মাণের উদ্দেশ্যে এই জায়গা ক্রয় করেছেন। অভিযোগ, ওই হাসপাতালের রাস্তার নির্মাণের জন্যই তাঁরা মডার্ণ এক্স-রে ও প্যাথলজি ক্লিনিকের সীমানা প্রচীরসহ ভেতরে তান্ডব চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে।

সকাল ১০টায় সরেজমিনে দেখা গেছে, মডার্ণ এক্স-রে ও প্যাথলজি ক্লিনিকের সীমানা প্রাচীর ও স্থাপনার গুড়িয়ে দেওয়া অংশ পড়ে রয়েছে। ক্লিনিকের দেয়াল ভাঙচুরের অংশবিশেষ পড়ে রয়েছে।
পৌরসভার সার্ভেয়ার মাহবুব হোসেন জানান, চলতি বছরের গত ৩ জুলাই চিকিৎসক জাকারিয়া পৌরসভার কাছে একটি আবেদন করেছিল। ওই আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের রোডে প্রস্তাবিত ডা. জাকারিয়া মা ও শিশু জেনারেল হসপিটালের দক্ষিণপাশে পৌরসভার পূর্ব-পশ্চিমে লম্বালম্বি দখলকৃত রাস্তাটি
(মডার্ণ এক্স-রে ও প্যাথলজি ক্লিনিক সীমানা প্রাচীরের দক্ষিণের পায়ে হাঁটার রাস্তা) সর্বসাধারণ ও সেবামূলক কাজে ব্যবহার করার জন্য দখলমুক্ত করার আবেদন করেন। জাকারিয়া ওই মা ও শিশু জেনারেল হসপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদের সার্ভেয়ার রজব আলী বলেন, যেখানে ভাঙচুর করা হয়েছে তার পাশের পায়ে হাঁটার রাস্তাটি সিএস খতিয়ানে জেলা পরিষদের। তিনি বলেন, মডার্ণ এক্স-রে ও প্যাথলজি ক্লিনিকের সীমানা প্রাচীরের ভেতরে জেলা পরিষদের কোনো জায়গা নেই।
প্রত্যক্ষদর্শী মডার্ণ এক্স-রে ও প্যাথলজি ক্লিনিকের এক্স-রে টেকনিশিয়ান শফিক মিয়া বলেন, রাত দুইটা থেকে আড়াইটার দিকে প্রায় শতাধিক লোক বুলডোজার নিয়ে ভাঙচুর শুরু করে। বাঁধা দিতে গেলে তারা পৌরসভা থেকে এসেছেন বলে জানান। ভাঙচুরের সময় বিদ্যুৎ চলে যায়।
মডার্ণ এক্স-রে ও প্যাথলজি ক্লিনিকের পরিচালক আজিজুল হক বলেন, রাতের আঁধারে একদল দুর্বৃত্ত এসে ভাঙচুর চালিয়েছে। ক্লিনিকের দুটি ফটক, একটি জেনারেটর, একটি আল্ট্রাসনোগ্রাফ মেশিন ও একটি এসি ট্রাকে করে নিয়ে গেছে। এছাড়া ক্লিনিকের তিনটি জেনারেটর, সাতটি এসি, একটি আলট্রাসনোগ্রাফ মেশিন ও ৫টি কম্পিউটার নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ভাঙচুরে প্রায় ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার মেয়র নায়ার কবির জানান, আমাদের ভুলডোজার নষ্ট হয়ে ভাদুঘর পড়ে রয়েছে। আমাদের কোনো লোক সেখানে যায়নি। প্রায় দুই মাস আগে চিকিৎসক মো. জাকারিয়া জায়গাটি খালি করে দেওয়ার জন্য আমাদের কাছে আবেদন করেছিল। আবেদনটি পৌরসভার প্রকৌশল শাখায় পড়ে রয়েছে। তিনি আরও বলেন, কাজটি খারাপ হয়েছে। যদি জায়গাটি সরকারের হয়ে থাকে তাহলে সরকার এর ব্যবস্থা নিবে। একটা চক্র রাতে আঁধারে এই কাজ করতে এটা মেনে নেওয়া যায় না।
সকালে ঘটনাস্থল পরির্দশন করতে আসেন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম উদ্দিন এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) রেজাউল কবির।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম উদ্দিন বলেন, আমরা ঘটনাস্থল পরির্দশন করেছি। রাত থেকে সকাল পর্যন্ত এই ঘটনার সংবাদ কেই আমাদের দেয়নি। এঘটনায় পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। মামলা দিলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

মন্তব্য করুন

Development by: webnewsdesign.com