আপডেট

x

চান্দপুরে চাঁদা না দেওয়ায় বিধবাকে মারধোর ঘর বাড়ি লুটপাট

শুক্রবার, ১৯ জুন ২০২০ | ৯:৪৬ অপরাহ্ণ |

চান্দপুরে চাঁদা না দেওয়ায় বিধবাকে মারধোর ঘর বাড়ি লুটপাট
Spread the love

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর উপজেলার মাছিহাতা ইউনিয়নের চান্দপুর গ্রামে আছিয়া খানম নামে এক বিধবাকে মারধোর ও তার বাড়ি লুটপাটের ঘটনার পর পরিবারটি এখন গৃহহারা হয়ে পালিয়ে রেড়াচ্ছেন ।

এ ঘটনায় আছিয়া বেগম গত রোববার (১৪ জুন) ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানায় বাদী হয়ে একটি মামলা করেন।

webnewsdesign.com

মামলার এজাহারে আছিয়া খানমের অভিযোগ, গত ৯ জুন চাঁদা না দেওয়ায় সুমন চৌধুরী (৩৫), জাহিদ চৌধুরী (৫০), ইব্রাহিম মিয়া (৩০), শামীম মিয়া (২৫) ও বাদল চৌধুরীর তাদের লোকজন নিয়ে তাদের বাড়িতে হামলা করে। এ সময় আছিয়া বেগম ও তার ভাই রবিন আহমেদ রতনকে অমানবিকভাবে মারধোর করে তারা। পরে গত ১০ জুন সকালে সুমন চৌধুরী ও বাদল চৌধুরী তাদের লোকজন নিয়ে আছিয়া খানম ও তার ভাই রবিন আহমেদ রতনের ঘর বাড়ি লুটপাট করেন।

এ সময় আছিয়া খানম ও রবিন আহমেদ রতনসহ আরও বেশ কয়েক জন আহত হন।

আছিয়া খানম ও তার ভাইয়ের বাড়ি থেকে ৯ লাখ ৬৪ হাজার ৫০০ টাকার মূল্যবান জিনিসপত্র লুট ও ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার জিনিস পত্র আসামিরা নষ্ট করে বলেও তিনি এজাহারে উল্লেখ্য করেন।

আছিয়া খানম ও রবিন আহমেদ রতনের ঘর বাড়ি লুটপাটের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় সরেজমিনে অনুসন্ধানে গিয়ে।

চন্দাপুর গ্রামে শুক্রবার (১৯ জুন) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আছিয়া বেগম ঘরে সকল আসবাবপত্র ভেঙ্গেচুরে রয়েছে। টিভি, ফ্রিজ, আলমারিসহ ঘরের সকল দামী দামী জিনিসপত্র ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। এছাড়া ঘরে সকল জিনিসপত্র এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।

এ বিষয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে ও আছিয়ার আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জান যায়, সুমন চৌধুরী ও বাদল চৌধুরী লোকজন নিয়ে গত ১০ জুন আছিয়া ও তার ভাইয়ের বাড়ি ঘর ভাংচুর ও লুটপাট করে। এর পর থেকেই আছিয়া, তার মা ও ভাইকে এই বাড়িতে ঢুকতেও দিচ্ছে না আসামীরা।

এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা রইস মুন্সি বলেন, আছিয়ার বাড়ির সীমানা নিয়ে বাদল চৌধুরীর সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরে বিবাদ চলছে। বিষয়টি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সমাধান করবেন বলে আশ্বাস দেন। জায়গা নিয়ে সর্বশেষ আবারও তাদের মধ্যে সর্বশেষ গত ৯ জুন বিবাদ হয়। পরে ঐ দিন সুমন চৌধুরী ও বাদল চৌধুরীর লোকজন আছিয়া ও তার ভাইকেসহ আরও কয়েকজনকে মেরে আহত করে এবং তাদের বাড়ি ঘরে লুটপাট করে। এর পর থেকে আসামিরা আছিয়ার খানমকে ও তার মা বা ভাইকে কাউকেই তাদের বাড়িতে ঢুকতে দিচ্ছে না।

এ ব্যপারে আছিয়া খানম বলেন, সুমন চৌধুরী ও বাদল চৌধুরী সঙ্গে আমার দীর্ঘদিন ধরে সীমানা নিয়ে বিরোধ চলছে। এই বিরোধকে কেন্দ্র করে এর আগেও বাদল চৌধুরীর লোকজন আমার বাড়িতে হামলা করে। গত ২৯ মে এ সংক্রান্ত একটি মামলা সদর থানায় করি।

তিনি বলেন, সীমানা বিরোধ স্থানীয়ভাবে সালিসের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়। কিন্তু এর পরে সুমন চৌধুরী ও বাদল চৌধুরী আমার কাছে চাঁদা দাবি করে এবং আমার বাড়ির বিল্ডিংয়ের কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য করে। পরে আমি চাঁদা না দেওয়ায় তারা আমার ওপর ও আমার ভাইসহ আরও বেশ কয়েকজনের ওপর প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে হামলা করে। এতে আমি আর আমার ভাইসহ আরও অনেকে গুরুতর আহত হয়। হামলার ঠিক এক দিন সুমন ও বাদল চৌধুরীর তার লোকজন নিয়ে আমদের বাড়ি ঘর লুটপাট করে।

এদিকে বাদল চৌধুরী ও সুমন চৌধুরী আত্মীয় স্বজনরা আছিয়ার অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেছেন। তারা অভিযোগ করে বলছেন, আছিয়া জোর করে বাদল চৌধুরীর জায়গায় বিল্ডিং করছেন। এর প্রতিবাদ করায় আছিয়ার খানমের লোকজন বাদল চৌধুরীর ছেলে ফাহিমকে (১৮) মেরে আহত করে। গত ১০ জুন সদর থানায় বাদল চৌধুরীর বাদী হয়ে এ সংক্রান্ত একটি মামলা করেন।

এ বিষয়ে বাদল চৌধুরীর ভাগিনা আমলগীর চৌধুরী বলেন, গ্রামের সালিশ থেকে আছিয়া খানমকে সীমানার বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখতে। কিন্তু আছিয়া খানম এই রায় না মেনে কাজ শুরু করা আমরা প্রতিবাদ করি। প্রতিবাদের এক পর্যায়ে আছিয়া তার লোকজনকে দিয়ে আমার মামাতো ভাই ফাহিমকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে হত্যার চেষ্টা করে। সে এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সেলিম উদ্দিন বলেন, দুই পক্ষই মামলা করেছে। আমরা তদন্ত করে দেখছি কারা প্রকৃত দোষী। এখন পর্যন্ত দুই জনকে এ ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে। দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।

মন্তব্য করুন

Development by: webnewsdesign.com