গৃহবধূকে নগ্ন করে মধ্যযুগীয় নির্যাতন, ‘৯৯৯’এ কল দিয়ে রক্ষা করলো স্বামী

বুধবার, ২২ জানুয়ারি ২০২০ | ১১:৪৩ অপরাহ্ণ |

গৃহবধূকে নগ্ন করে মধ্যযুগীয় নির্যাতন, ‘৯৯৯’এ কল দিয়ে রক্ষা করলো স্বামী
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নারী
Spread the love

ব্রা‏হ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে আসমা বেগম (৩২) নামের এক গৃহবধূকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নগ্ন করে নির্যাতন করা হয়েছে। উপজেলার শ্যামগ্রাম ইউনিয়নের নোয়াগ্রামে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে অমানবিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগে জানা গেছে।

পরে ‘৯৯৯’ এ ফোন দেয়া হলে ওই নারীকে মুমূর্ষ অবস্থায় পুলিশ উদ্ধার করে নবীনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনে ভর্তি করে।

webnewsdesign.com

এদিকে এ ঘটনায় গত সোমবার থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

মামলার এজাহার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার শ্যামগ্রাম ইউনিয়নের নোয়াগ্রামের বাসিন্দা নজরুল ইসলামের স্ত্রী আসমা বেগমকে গত রবিবার বিকেলে প্রতিবেশী শরীফ ডাক্তারের বাড়িতে ডেকে নেয়া হয়। সেখানে শরীফ ডাক্তারের স্ত্রী সীমা আক্তার ও তার ভাই শাহেদ সরকার গৃহবধূ আসমার ওপর অতর্কিতে হামলা চালায়। এক পর্যায়ে গৃহবধূকে নগ্ন করে লোহার রড দিয়ে ও বোতল দিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যতন চালানো হয়। ওই সময় আসমা একাধিকবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরে নির্যাতনকারীরা পানি ঢেলে আসমাকে কয়েকবার জ্ঞান ফিরিয়ে এনে পুনরায় মারধর করতে থাকেন। এক পর্যায়ে আসমার আর্তচিৎকারে তার স্বামী নজরুল তার স্ত্রীকে বাঁচানোর জন্য ৯৯৯ ফোন করেন। ফোন পেয়ে নবীনগর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আসমাকে মুমূর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে নবীনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনে ভর্তি করে।

আসমার স্বামী নজরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, শরীফ ডাক্তার ও তার ভাইদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক বিরোধ চলছিল। এছাড়া শরীফ ডাক্তারের ভাই সাহেদ সরকার তার স্ত্রীকে প্রায়ই কু-প্রস্তাব দিতেন। কিন্তু এতে আসমা রাজি না হওয়ায় পরিকল্পিতভাবে বাড়িতে ডেকে নিয়ে চুরির অপবাদ দিয়ে এই অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়।

তবে এ বিষয়ে অভিযুক্তদের সাথে বারবার চেষ্টা করেও কথা বলা যায়নি।

৯৯৯’ এ কল পেয়ে আসমাকে উদ্ধার করা নবীনগর থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আশরাফ উদ্দিন বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে মুমূর্ষ অবস্থায় গৃহবধূকে উদ্ধার করা হয়। তবে আসমা পাঁচলাখ টাকা চুরি করায় শরীফ ডাক্তারের বাড়ির লোকজন তাকে মারধর করেছেন বলে নির্যাতনকারীরা আমার কাছে অভিযোগ করেন। সেসময়ে শরীফ ডাক্তার গৃহবধূ আসমার কাছ থেকে চুরি হওয়া উদ্ধারকৃত চুরির তিনলাখ টাকা আমাকে এনে দিলে, আমি সেই টাকা জব্দ করে থানায় নিয়ে আসি।

এদিকে হাসপাতালের বেডে শুয়ে কাতড়ানো অবস্থায় নির্যাতিতা আসমা বেগম জানান, শরীফ ডাক্তারের ভাইয়ের কু-প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় অনেকদিন ধরেই আমার ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। ঘটনার দিন আমাকে তাদের বাড়িতে ডেকে নিয়ে আমার বিরুদ্ধে চুরির অপবাদ দেয়। পরে লোহার রড, পেপসির বোতল ও রুটি বানানোর বেলুন দিয়ে আমাকে বেধড়ক পেটানো হয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নবীনগর থানার সেকেন্ড অফিসার মো. জসিম উদ্দিন বলেন, শুনেছি, বিষয়টির আপস মীমাংসার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তাই এই বিষয়ে কোন কথা বলব না।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নবীনগর সার্কেল) মেহেদী হাসান দুপুরে বলেন, ঘটনাটি ‘নির্মম ও মধ্যযুগীয় নির্যাতন’। চুরির অপবাদ হলেও কেউ এমন বর্বর নির্যাতন চালাতে পারে না। এ ঘটনায় সোমবার রাতেই মামলা নেয়া হয়েছে। কোন মীমাংসা নয়, শিগগিরই অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হবে।

 

রাফি/-

মন্তব্য করুন

Development by: webnewsdesign.com