আপডেট

x

কসবায় পৌর এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপহারের তালিকায় সচ্ছলদের নাম

বুধবার, ১৭ জুন ২০২০ | ৭:৫০ অপরাহ্ণ |

কসবায় পৌর এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপহারের তালিকায় সচ্ছলদের নাম
Spread the love

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা পৌরসভা এলাকার চারটি ওয়ার্ডে প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপহারের তালিকায় প্রণয়নে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

এই চারটি ওয়ার্ডে প্রণয়নকৃত তালিকায় শুধু মাত্র ২০ শতাংশ নাম করোনা ভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত, দুস্থ, অসহায় ও কর্মহীনদের নামে উঠে এসেছে। আর বাকি ৮০ শতাংশ নামের তালিকায় সচ্ছলদের নাম থাকায় তারাও প্রধানমন্ত্রীর ঈদ শুভেচ্ছার ২ হাজার ৫০০ টাকা পেয়েছেন।

webnewsdesign.com

কসবা পৌরসভায় প্রধানমন্ত্রীর ঈদ শুভেচ্ছার টাকার তালিকা প্রণয়নের অনিয়মের সঙ্গে সরাসরি জড়িত এই চার ওয়ার্ডের কাউন্সিলরা।

তারা হলেন কসবা পৌরসভা এলাকার ২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এনামুল হক ছোটন, ৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো.আবু ছায়েদ ও ৮ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হেলাল সরকার।

গত মঙ্গলবার (৯ জুন) ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসকের বরাবর এ সংক্রান্ত এই তিন কাউন্সিলর বিরুদ্ধে চারটি অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।

অভিযোগ পত্রে বলা হয়, এই তিন কাউন্সিলর কসবার চারটি ওয়ার্ডে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ শুভেচ্ছার টাকা প্রদানের তালিকা প্রণয়নের ব্যাপক অনিয়ম করেছেন। এক্ষেত্রে তারা স্বজনপ্রীতি দেখিয়ে উচ্চবিত্ত ও আত্মীয় স্বজনদের এই তালিকায় নাম দিয়েছেন। এছাড়া সরকারি বিভিন্ন ভাতাপ্রাপ্ত অর্থাৎ মুক্তিযোদ্ধাভাতা পায় এমন লোকজনদেরও তালিকায় নাম উঠানো হয়।

জেলা প্রশাসকের বরাবর পাঠানো অভিযোগ পত্রে আনিত অভিযোগের সত্যতাও পাওয়া গেছে স্থানীয় পর্যায়ে।

মঙ্গলবার (১৬ জুন) কসবার পৌরসভার এই চার ওয়ার্ডে অনুসন্ধানে গিয়ে এসব অভিযোগে সত্যতা পাওয়া যায়।

কসবার পৌর এলাকার ২ নং ওয়ার্ডের অনুসন্ধানে গিয়ে দেখা যায়, ওয়ার্ড কাউন্সিল এনামুল হক ছোটন তার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত স্থানীয় সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্য সৈয়দ গিয়াস উদ্দিন হায়দরর নাম স্থানীয় তালিকার ক্রমিক নং ৪ নাম্বারে উঠান।

২ নং ওয়ার্ডের শাহপুরে অবস্থিত সৈয়দ গিয়াস উদ্দিন হায়দার বাড়িতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চতুর্দিকে বাউন্ডারি ঘেরা পাকা বাড়ি। এছাড়া বিশাল জায়গায় জুরে তাদের পৈতৃক ভিটা বাড়ি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায় দেশ বিখ্যাত হায়দার খাতার মালিকের পরিবারের সদস্য সৈয়দ গিয়াস উদ্দিন হায়দার। গিয়াস উদ্দিন হায়দারের ব্যবসা রয়েছে চট্টগ্রাম। যা থেকে তিনি প্রতি মাসে লাখ টাকা আয় করেন। আর তাকেই ২ নাম্বার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রধানমন্ত্রীর ঈদ শুভেচ্ছার ২ হাজার ৫০০ টাকার তালিকা নাম উঠিয়েছেন।

এ বিষয়ে ২ নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতি মো.ফিরোজ মিয়া বলেন, পৌরসভার মেয়র ও ২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মিলে উচ্চবিত্তদের দেখে দেখে তালিকায় নাম উঠানো হয়েছে। স্বজনপ্রীতি ও উচ্চবিত্তদের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষায় কাউন্সিলর এই অনিয়ম করেছেন। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা ভাতাপ্রাপ্ত দুইজনের নামও তালিকায় দিয়েছেন তিনি।

যদিও এ ধরনের অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেন ২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এনামুল হক ছোটন। তিনি বলেন, এসব অভিযোগ মিথ্যা। আমি গরিব দুঃখীদের নাম তালিকায় দিয়েছি। কোনো উচ্চবিত্তের নাম আমি এই তালিকায় দেয়নি।

অভিযোগ পত্র নাম থাকা ৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো.আবু ছায়েদেরও অনিয়মের সত্যতা পাওয়া যায় সরেজমিনে।

৪ নং ওয়ার্ডের প্রধানমন্ত্রীর ঈদ শুভেচ্ছার টাকার তালিকার ক্রমিক নং ১ নাম্বারে নাম থাকা ব্যবসায়ী গোলাম রহমানের বাড়িতে সরেজমিনে দেখা যায়, তারও বাউন্ডারি করা পাকা বাড়ি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গোলাম রহমানের পরিবার আর্থিকভাবে অনেক সচ্ছল এবং পারিবারিক ব্যবসাও রয়েছে।

তার পরিবার কাউন্সিলরের ঘনিষ্ঠ হওয়া এই তালিকায় নাম উঠেছে।

এ বিষয়ে ৪ নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো.আরমান বলনে, ৪ নং ওয়ার্ডের প্রধানমন্ত্রীর ঈদ শুভেচ্ছার তালিকার নামের মধ্যে ২০ শতাংশ দরিদ্র ও অসহায়দের। বাকি ৮০ শতাংশ নাম গোলাম রহমানের সচ্ছল পরিবারের লোকজনদের।

এ ব্যাপারে ৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো.আবু ছায়েদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ৪ নং ওয়ার্ডের তালিকায় ৫৫ জনের নাম রয়েছে। এর মধ্যে মেয়রের কোটা রয়েছে, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলের কোটা রয়েছে। আমি যাদের নাম দিয়েছি তারা সবাই গরিব। বাকিদের নামের বিষয়ে কিছু বলতে পারব না।

একইভাবে ৮ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও রেজুলেশন ছাড়া ৯ নং ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা হেলাল সরকারেরও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়। তিনিও বাকি কাউন্সিলদের মতো স্বজনপ্রীতি ও মুখ পরিচয়ের খাতিরে সচ্ছলদের এ তালিকায় নাম উঠান। তার বিরুদ্ধে আনিত এসব অভিযোগের সত্যতা সরেজমিনে ঘুরে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া যায়।

কসবা পৌরসভার মেয়র ইমরান উদ্দিন মাসুদ জানান এ বিষয়ে কেউ তাকে অভিযোগ করেনি অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক বলেন হায়াত উদ দৌলা খান বলেন, এ সংক্রান্ত অভিযোগ আমরা পেয়েছি। অভিযোগগুলো আমরা তদন্ত করছি। সত্যতার প্রমাণ পেলে আমরা এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করব। যারা এই অপকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।

 

মন্তব্য করুন

Development by: webnewsdesign.com