আপডেট

x

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হতে অর্ধকোটি টাকাসহ ঢাকায় গিয়েছিল শান্ত (অডিও)

সোমবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ৭:৩৭ অপরাহ্ণ |

Spread the love

‘জয় ভাই গেলেগা প্যাঁচ। এই কারণে সেন্ট্রালে এখন পদ নিব। জেলা কমিটি করতে শেখ হাসিনা নিষেধ করছে। নাইলে জেলা কমিটির প্রেসিডেন্ট হয়ে যাইতাম, একটুর লাইজ্ঞা। ৫০ লাখ লইয়া ঘুরছি ঢাকায়। টাকা রুমে দিয়া, আমি বাইরে আইসা পড়ছি। ইতা খরচপাতি দেওয়া লাগে। কিন্তু নেত্রীর নির্দেশ, কমিটি না দিতে।’

কথা গুলো বলছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলা থেকে ৫ কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়া ছাত্রলীগ নেতা শান্ত কুমার রায়। শান্ত কুমার রায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বড়িকান্দি ইউনিয়নের থোল্লাকান্দি গ্রামের নির্মল রায়ের ছেলে। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক উপ-সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক। রয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদেও। ছাত্রলীগের রাজনীতির পাশাপাশি সক্রিয় সদস্য ছিলেন ইসকনের (ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস)। গত ১৮ ফেব্রুয়ারী থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন।

webnewsdesign.com

পালিয়ে যাওয়ার পর টাকা পাওয়ায় নবীনগর থানায় ১২টি লিখিত অভিযোগ করেছেন। এরমধ্যে আব্বাস উদ্দিন নামের এক ব্যবসায়ী ২০ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা ছাত্রলীগ নেতা শান্তের কাছে পাওনা রয়েছেন। এর প্রমাণ হিসেবে ১০ লক্ষ টাকা লেনদেনের একটি ভয়েস রেকর্ড শুধু তার কাছে রয়েছে। সেই টাকা লেনদেনের সময় আব্বাস উদ্দিন, শান্ত কুমার রায় ছাড়াও শ্যামল চন্দ্র দাস এবং সুজন নামের দুইজন উপস্থিত ছিলেন।

এই ভয়েস রেকর্ডটি এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। সেই রেকর্ডের শুনা যায় শান্ত কুমার রায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হতে ৫০ লক্ষ টাকা নিয়ে এক সপ্তাহ রাজধানীতে দৌড়ঝাঁপ করেছেন।

ভয়েস রেকর্ডে ছাত্রলীগ নেতা শান্ত কুমার রায়কে বলতে শুনা যায়- “৫০ লাখ টাকা লইয়া এক সপ্তাহ ঘুরছি দিতে, চাইলে আরও দিমু। আমারে সভাপতি দেওন লাগবো। পরে আওয়ামী লীগের নেতারা মানা করছে। ওবায়দুল কাদের প্যাঁচটা লাগাইছে।”

এরপর আব্বাস উদ্দিনের সাথে টাকা লেনদেনের কথা। তার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা গুণে বুঝে নেন শান্ত। তারপর সে বলে ঢাকা থেকে আব্বাস উদ্দিনকে লেনদেনের কাগজ করে দিবে। সুজন ও শ্যামলকে কাগজের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

শান্ত কুমার রায় এসময় বলেন, কেরাণীগঞ্জে একটা ছাপাখানার ব্যবসা কয়েকজন মিলে শুরু করতেছি। আস্তে আস্তে ব্যবসা না বাড়ালে চলমু কিভাবে! টাকা না থাকলে রাজনীতি করমু কেমনে, বড় লোক হমু হতেও পারমু না।
আব্বাস উদ্দিন টাকা লেনদেনের পর শান্ত কুমার রায়কে বলেন, ‘ছাত্রলীগের সভাপতিটা হয়ে গেলেই আস্তে আস্তে সব লাইনঘাট হয়ে যেত আপনার’।
উত্তরে শান্ত বলেন, ‘আরে ভাই কয়েন না, দোয়া করবেন। সভাপতি হতে পারলে তো মাসে এক কোটি টাকা আসতো এমনিতেই। কোন কামাই করা লাগতো না। এই বিয়ে সাদিও ছাত্রলীগের লাইজ্ঞা আটকায়া আছে।’

এই বিষয়ে পাওনাদার আব্বাস উদ্দিন বলেন, আমি সরল বিশ্বাসে টাকা গুলো তাকে দিছিলাম। এই রেকর্ড ছাড়া আমার কোন প্রমাণ নাই। সে নাকি ৫০ লাখ টাকা নিয়ে ঘুরছিল জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হতে। হতে না পেরে সে সময় বলেছিল তাকে কেন্দ্রে একটা পদ দিবে। পরে পেয়েছিল।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল বলেন, ‘কারো অপকর্মের দায়ভার ছাত্রলীগ নেবে না। ঘটনাটি আমরা খতিয়ে দেখছি। যদি শান্ত অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুদ্দিন আনোয়ার বলেন, ‘এই পর্যন্ত ১২জন শান্তের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ থানায় দিয়েছেন। আমরা অভিযোগ গুলো তদন্ত করছি। পাশাপাশি তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।’

মন্তব্য করুন

Development by: webnewsdesign.com