ব্রাহ্মণবাড়িয়ার খাকচাইল প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষকের অনিয়মের অভিযোগের তদন্ত শুরু

রবিবার, ০২ এপ্রিল ২০২৩ | ১১:৩২ অপরাহ্ণ |

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার খাকচাইল প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষকের অনিয়মের অভিযোগের তদন্ত শুরু
Spread the love

শাহীনা আখতার। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন প্রধান শিক্ষক। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নিকট তাঁর বিরুদ্ধে ২১ দফা লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন একই প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষকগণ। এর পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় অভিভাবক তথা এলাকাবাসীও। পাহাড়সম এসব অভিযোগের তোয়াক্কা না করে সদম্ভে টিকে থাকাসহ সহকারী শিক্ষকদের উল্টো হেনস্থা করেই চলেছেন। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত শুরু করেছে সদর উপজেলা শিক্ষা অফিস।

এরআগে,খাকচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহীনা আখতারের অনিয়ম-দুর্নীতি-অপকর্মের বিষয়ে সরেজমিন তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবীতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন তারই সহকর্মী ছয়জন সহকারী শিক্ষক। এর পাশাপাশি প্রধান শিক্ষক শাহীনা আখতারের অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্থানীয় এলাকাবাসীও সোচ্চার। তাঁর অনিয়ম-দুর্নীতি-স্বেচ্ছাচারিতা-অর্থ আত্মসাত সম্পর্কে অবহিতকরণ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর গ্রামবাসীর পক্ষে ২৮ জন গণ্যমান্য ব্যক্তি স্বাক্ষরিত আবেদন দাখিল করেন।

webnewsdesign.com

দাখিলকৃত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, খাকচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহীনা আখতার অপর কোনো শিক্ষককে সংশ্লিষ্ট না করে বিদ্যালয়ের সকল আর্থিক লেনদেন নিজেই তৈরি করেন। বিদ্যালয়ের রেজুলেশনে সভাপতির স্বাক্ষর না নিয়ে অনেক সময় সভাপতির স্বাক্ষর নিজে জাল করেন। দুই হাজার টাকার ওয়ার্কশিটের জন্য ভাউচার দেখান দশ হাজার টাকারও বেশী। একটি বেসিন স্থাপনে তিনি ভাউচার দেখান ১৫ হাজার টাকা। বিদ্যালয়ের ওয়াশ ব্লকে দু’টি সেফটি ট্যাঙ্কি করার কথা থাকলেও তা না করে সেফটি ট্যাঙ্কি নির্মাণের টাকা আত্মসাৎ করেন। বিধি মোতাবেক পুরাতন বিল্ডিং ভাঙার নিলাম না দিয়ে নিজের খেয়ালমত বিল্ডিং ভেঙেছেন, এ ব্যাপারে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও হয়েছে। বিদ্যালয় অঙ্গনে থাকা গাছ বিনা অনুমতিতে গোপনে করে বিক্রি করে দেয়াসহ নিয়ম লঙ্ঘন করে বিদ্যালয়ের পুরাতন প্রাচীর এককভাবে বিক্রি করে সেই টাকা আত্মসাৎ, বিভিন্ন জাতীয় দিবসে সরকারের বরাদ্দকৃত টাকায় শিক্ষার্থীদের উপহার দেবার কথা থাকলেও পুরাতন বই ব্যবহার করে ছবি তুলে বরাদ্দকৃত টাকা আত্মসাৎ করেন প্রধান শিক্ষক। অযথা শিক্ষার্থীদের ড্রেস পরিবর্তন করে ড্রেস প্রতি সাড়ে সাতশ’ টাকারও বেশিতে শিক্ষার্থীদের কাছে বিক্রি করে ব্যবসা করেন। ক্যাশ বুক মিলাতে ইচ্ছামত ভাউচার বানিয়ে নিজেই স্বাক্ষর করেন। একাধিক মামলায় অভিযুক্ত ফারুককে লাঠিয়াল হিসেবে ব্যবহারের মানসেই বিদ্যোৎসাহী সদস্য করে তাকে দিয়ে সহকারী শিক্ষকদের প্রতি অশোভন আচরণ ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা, বিভিন্নভাবে হেনস্তা করান। অতীতে অভিভাবক পারভীন আক্তার ও বর্তমান বিদ্যুৎসাহী সদস্য ফারুক প্রধান শিক্ষকের হয়ে সহকারী শিক্ষকদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার চেষ্টায় সহকারী শিক্ষকরা সবসময় থাকেন আতঙ্কে। প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের বাইরে গেলে নিয়ম মোতাবেক বিদ্যালয় পরিচালনার জন্য সহকারী শিক্ষকদের দায়িত্ব দিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও বিদ্যোৎসাহী সদস্য ফারুককে দায়িত্ব দিয়ে যান। আর তখনই ফারুক শিক্ষকদের সাথে অশোভন আচরণ করাসহ ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। এতে মহিলা শিক্ষকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। বিদ্যোৎসাহী সদস্য ফারুকের ছেলেকে পরীক্ষার কক্ষে প্রায় সময় উত্তর বলে দেয়ার বিষয়টি এটিইও মহোদয় হাতেনাতেও ধরেছেন। অভিভাবক মিটিংয়ের নামে প্রধান শিক্ষকের আজ্ঞাবহ কতেক অভিভাবক ও বখাটে লোকদের দিয়ে সহকারী শিক্ষকদের বিভিন্ন ক্ষুদ্র দোষ-ত্রুটিগুলোকে বাড়িয়ে বলে অপমানিত করেন।সহকারী শিক্ষকদের জরুরী ছুটির প্রয়োজন হলে প্রধান শিক্ষক ছুটি মঞ্জুর না করে সবসময়ই উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে যাবার কথা বলেন। এমনকি তিনি ছুটিতে থাকলে, কোন শিক্ষকের জরুরী প্রয়োজনে ছুটির দরকারে ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেন না। হোম ভিজিটের নামে দীর্ঘসময় বিদ্যালয়ে না থেকে অভিভাবকদের বাড়িতে অবস্থান করে সহকারী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে রটনা করেন ও বিদ্যালয়ের অভিভাবকদের সহকারী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলার চেষ্টা করেন, গ্রুপিং করার চেষ্টা করেন; যা বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশকে কলুষিত করছে। তিনি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কথা বলে প্রায়শই দুপুর একটার পর বিদ্যালয়ে অবস্থান করেন না। নৈমিত্তিক ছুটির ক্ষেত্রে সমতা রক্ষা না করে তিনি শিক্ষকদের মধ্যে গ্রুপিংয়ের জন্য কাউকে ছুটি বেশি দেন আবার কেউ প্রয়োজনে ছুটির দরকার হলে তাদেরকে ছুটি না দিয়েই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে দেখিয়ে দেন। এসব অনিয়মের কথা সহকারী শিক্ষকগণ আলোচনা করায় তিনি সহকারী শিক্ষকদের বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছেন। কেউ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালে প্রধান শিক্ষক তার আজ্ঞাবহ লোক দিয়ে বিভিন্নভাবে হেনস্থা করে বদলী করার ব্যবস্থা করবেন বলেও হুমকি দেন। এমনি বহু অনিয়মের সাথে প্রধান শিক্ষক শাহীনা আখতার জড়িত।

অপরদিকে প্রধান শিক্ষক শাহীনা আখতারের বিরুদ্ধে স্থানীয় এলাকাবাসীও ১৭ দফা অভিযোগ দাখিল করেন। বিদ্যালয়ের মাঠে ও চারপাশে থাকা গাছ বিক্রি, অহেতুক শিক্ষার্থীদের ড্রেস পরিবর্তন, ব্লাড গ্রুপ নির্ণয়ে ৮০ টাকা করে আদায়, করোনা’র টিকা রেজিস্ট্রেশন বাবদ টাকা আদায়, কোচিং বাণিজ্য, বই বাণিজ্যের মাধ্যমে টাকা আদায়, বিভিন্ন নির্মাণ কাজের নামে অর্থ আত্মসাত করা প্রধান শিক্ষক শাহিনা আখতারের নেশা। এমনকি বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে বিদ্যালয়ের নামও পরিবর্তন করে ফেলেন তিনি। এসব বিষয়ে তদন্ত পূর্বক প্রধান শিক্ষক শাহীনা আখতারকে অপসারণ করে খাকচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার মান ফিরিয়ে আনতে ২৮ জন গ্রামবাসী স্বাক্ষর করে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রথম দফায় সদর উপজেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা (এটিইও) মো. ইউসুফ তদন্ত করেন। পরবর্তীতে ২য় দফায় গত ৩০ মার্চ সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা উম্মে সালমার নেতৃত্বে আবারও তদন্ত করা হয়।

অভিযোগের প্রথম তন্তকারী কর্মকর্তা সদর উপজেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা (এটিইও) মো. ইউসুফ বলেন, ‘সরেজমিনে তদন্তে গিয়ে অভিযোগকারী শিক্ষকদের থেকে তাদের অভিযোগের সপক্ষে লিখিত নিয়েছি। অভিযোগের বিষয় অনেক, প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। আমরা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবো, তার আগে সরাসরি কিছু বলতে পারবো না।’

গত ৩০ মার্চ তদন্তকালে সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা উম্মে সালমা উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা তদন্ত করছি। এখানে সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে তদন্ত করা হবে। তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।’

মন্তব্য করুন

Development by: webnewsdesign.com