ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে পূর্ব বিরোধের জের ধরে মনমোহিনী দাস (৯৫) নামের এক বৃদ্ধার মরদেহ দাহ করতে যেতে রাস্তা না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। পরে বাধ্য হয়ে পুকুরের পানির উপর দিয়ে পাড় করে শ্মশানে নিয়ে দাহ করা হয়েছে ওই বৃদ্ধার মরদেহ। বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার তালশহর (পশ্চিম) ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়ার এই ঘটনার ভিডিও ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তালশহর পশ্চিম পাড়ার মৃত কার্তিক চন্দ্র দাসের ছেলে হরিধন দাসের পরিবারের সাথে নানান বিষয় নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল প্রতিবেশী পরিমল দাস ও হারাধন দাসের পরিবারের বিরোধ চলে আসছিল। হরিধন দাস বাড়ি থেকে বের হতে নিজের মালিকাধিন কোন রাস্তা নেই। বাড়ি উত্তর ও পাশের বাড়ি গুলোর ভেতর দিয়ে আসা যাওয়া করতে হয়। বৃহস্পতিবার ভোরে হরিধন দাসের ৯০বছরের বৃদ্ধা মা মনমোহিনী দাস মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর পর মরদেহ শ্মশানে দাহ করতে নিতে পরিমল দাস ও হারাধন দাসে বাড়ির উপর দিয়ে নিয়ে যাতে অনুমতি আনতে যান হরিধন দাসের ছেলে বিজয় দাস। এসময় হারাধন দাস তাদের বাড়ির উপর দিয়ে লাশ নিয়ে যেতে নিষেধ করেন বিজয় দাসকে। পরে বাধ্য হয়ে পুকুরের পানির উপর দিয়ে কোলে নিয়ে পাড় করে মরদেহটি শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়। এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
এই বিষয়ে হরিধন দাসের ছেলে বিজয় দাস অভিযোগ করে বলেন, তাদের সাথে আগে থেকে ঝামেলা ছিল। আমাদের সম্প্রদায়ে কারো বাড়ির উপর দিয়ে লাশ নিয়ে যেতে হলে, সেই বাড়ির অনুমতি লাগে। তাই হারাধন দাসের কাছে তার বাড়ির উপর দিয়ে শ্মশানে লাশ নিয়ে যেতে অনুমতি আনতে গিয়ে ছিলাম। হারাধন দাস লাশ নেওয়ার অনুমতি দেয়নি। তার স্ত্রী বলেছেন, অন্য দিকে রাস্তা বানিয়ে নিয়ে যেতে। পরে পরিমল দাসের কাছে অনুমতির জন্য যাই, সেখানে তার ছেলে লাশ নিয়ে যেতে নিষেধ করেন। উপায় না দেখে বাধ্য হয়ে পুকুরের পানির উপর দিয়ে লাশটি দাহ করতে নিয়ে যেতে হয়েছে।
অভিযুক্ত হারাধন দাস বলেন, আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের নিয়ম অনুযায়ী কার্তিক মাসে আমাদের শুধু সবজি খেতে হয়। যদি আমাদের বাড়ির উপর দিয়ে কেউ লাশ নিয়ে যায়, তাহলে আমাদের হাড়ি পাতিল সহ সবকিছু ফেলে দিতে হয়। নতুন করে এসব কিনতে হবে। তাই আমি লাশ নিয়ে যেতে নিষেধ করেছি।
তবে হারাধন দাসের বাড়ির মুরুব্বি বীর মুক্তিযোদ্ধা গৌর দাস মাস্টার বলেন, লাশ নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আমাকে কেউ অবগত করেনি। অবগত করলে এই ঝামেলাটি হতো না। গত তিন /চার মাস আগেও তাদের বাড়ির একজন মারা যাওয়ায় লাশ নিতে তখন অনুমতি দিয়েছি।
এই বিষয়ে তালশহর (পশ্চিম) ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু সামা বলেন, আমাকে বিষয়টি অবগত করেছে। সন্ধ্যার পর দুই পরিবারকে নিয়ে বসে ঘটনাটি মিমাংসা করার চেষ্টা করবো।
আশুগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজাদ রহমান জানান, বিষয়টি স্থানীয় ভাবে কেউ অবগত করেনি। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে খোঁজ নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Development by: webnewsdesign.com
মন্তব্য করুন