ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমান্তবর্তী কসবা উপজেলায় মাদকসহ আটক সিএনজি চালিত অটো রিকশা টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠার পর দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে৷ গত ১১ ফেব্রুয়ারী এই ঘটনায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। জাগোনিউজে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর অভিযুক্ত কসবা থানা পুলিশের উপপরিদর্শক খায়রুল ইসলাম ও সহকারী উপপরিদর্শক মুখলেছুর রহমানের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। এর তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কসবা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার দেলোয়ার হোসেনকে।
কসবা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. দেলোয়ার হোসেন বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারী) বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, সংবাদ প্রকাশের পর পুলিশ সুপার স্যার আমাকে ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। আশা করছি, ২/৩ দিনের ভেতরে ঘটনাটি তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দাখিল করতে পারবো।
কসবা থানা ও স্থানীয় সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৪ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যা কিছুটা আগে উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের নোয়াগাও মোড়ে মাদক উদ্ধারে অভিযান চালায় থানার উপপরিদর্শক (এসআই) খায়রুল ইসলাম ও সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মুখলেছুর রহমান। অভিযানকালে একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা তল্লাশির জন্য আটক করেন। এসময় চালক সহ সিএনজিতে থাকা তিন যুবকের মধ্যে একজন দৌড়ে পালিয়ে যান৷ পুলিশ সিএনজি চালক বাহার মিয়া ওরফে মনা’র দেহ তল্লাশি করে আন্ডারওয়্যারের ভেতর লোকানো ১৫২ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে। এই ঘটনায় বাহার মিয়া ওরফে মনা (৩০) ও তার সাথে থাকা সোহেল মিয়া (২২) নামের আরেক যুবককে আটক করে পুলিশ। পাশাপাশি সিএনজি থেকে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়া মো. হাকিম (২৯) কে আটক করা হয়। তারা আটককৃত ৩জনই জেলা শহরের গোকর্ণঘাট এলাকার বাসিন্দা। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ইয়াবার মূল মালিক হাকিম এবং সহযোগী মনা ও সোহেল। ঘটনাস্থলে জব্দ তালিকা করার পর স্থানীয় দুইজনের সাক্ষি হিসেবে সাক্ষর নিয়ে পুলিশ সিএনজিসহ ইয়াবা এবং আটক তিন মাদক ব্যবসায়ীকে থানায় নিয়ে আসেন।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে একটি সূত্র জানায়, থানায় আসার পর সিএনজি চালক মনার বাড়িতে খবর দেওয়া হয়। তার পরিবারের সদস্যরা গেলে মাদক পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত সিএনজিটি ছাড়িয়ে নিতে অভিযানে থাকা এএসআই মুখলেছ ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। পরবর্তীতে রাতে ৩০ হাজার টাকা মুখলেছের হাতে দেওয়া হয়, এসময় মধ্যস্থতা করেন রাসেল নামের এক সোর্স। টাকা পাওয়ার পর মধ্যরাতে সিএনজিচালিত অটোরিকশা রিকশাটি ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর দিন ৫ ফেব্রুয়ারী ১৫২ পিস ইয়াবাসহ হাকিমকে প্রধান আসামী করে সিএনজি চালক মনা ও সোহেলের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করেন এসআই খায়রুল ইসলাম। আদালতে আসামীদের সাথে পাঠানো হয় জব্দ তালিকা। সেই তালিকা মাদকের কথা লিখা থাকলেও সিএনজি চালিত অটো রিকশার কথা উল্লেখ নেই। জব্দ তালিকায় সাক্ষি হিসেবে মো. জাহাঙ্গীর ও সাইফুল ইসলাম নামের দুইজনের নাম এবং স্বাক্ষর রয়েছে।
এই বিষয়ে জব্দ তালিকায় স্বাক্ষী হিসেবে থাকা সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার নাম সাক্ষি হিসেবে এএসআই মুখলেছ ভাই দিয়েছে। উনি আমার পূর্ব পরিচিত। আমি বাড়িতে ফেরার সময় সে দিন দেখা হয়। এসময় সিএনজিসহ তিনজনকে আটক করে। তল্লাশি করে একজনের আন্ডারওয়্যারের ভেতরে ইয়াবা পাওয়া যায়। পরে সিএনজি সহ তিনজনকে তারা নিয়ে যায়। আমি স্বাক্ষী থাকতে চাইনি, মুখলেছ ভাই বলেছে সমস্যা হবে না। আমার এলাকার জাহাঙ্গীর ভাইকেও সাক্ষী করা হয়।
মো. জাহাঙ্গীর নামে অপর সাক্ষী বলেন, আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম। পুলিশ সিএনজিসহ তিনজনকে ইয়াবা সহ আটক করে।
Development by: webnewsdesign.com
মন্তব্য করুন