ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সন্ত্রাসীর ছুরিকাঘাতে নিহত সাংবাদিক ও সেচ্চাসেবক আশিকুল ইসলাম আশিকের(২৭) দাফন সম্পন্ন হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বাদ আসর আশিকের গ্রামের বাড়ি জেলার বিজয়নগর উপজেলার পত্তন ইউনিয়নের মনিপুর বন্দরবাজারে সংলগ্ন গোরস্তানে তাকে দাফন করা হয়েছে।
এরআগে, মঙ্গলবার দুপুরে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল মর্গে আশিকের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ময়নাতদন্তের পর পরই হাসপাতাল প্রাঙ্গণে আশিকের প্রিয় সংগঠন ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘরের সদস্যরা শেষ গোসল করান। গোসল শেষে কাফনের পর শহরের ট্যাংকের পাড় মাঠে বাদ যোহর আশিকের প্রথম নামাজে জানাজা সম্পন্ন হয়। জানাজার আগে বক্তব্যে নিহত আশিকের পিতা আশরাফ উদ্দিন তার বক্তব্যে খুনিদের ফাঁসি দাবি করেন। জানাজায় ইমামতি করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদস্য সভাপতি রাকিবুল ইসলাম। এতে সাংবাদিক, রাজনৈতিক ও সেচ্ছাসেবীরা অংশগ্রহণ করে। জানাজা শেষে এক হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। কান্নায় ভেঙে পড়েন আশিকের সংগঠন ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘরের সদস্যরা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘর সংগঠনের সদস্য রাকিবুল ইসলাম বলেন, আমাদের সংগঠন প্রতিষ্ঠার পর একমাত্র আমরাই জেলার সব অজ্ঞাত উদ্ধার হওয়া মরদেহ কবর দিয়ে আসছি। এই পর্যন্ত শতাধিক কবর আমরা দিয়েছি। পাশাপাশি রক্তদান তো নিয়মিত বিষয়। প্রতিটি কাজেই আশিক সক্রিয় ছিল। অথচ আমাদের সংগঠনের মিটিং শেষে ফেরার পথে তাকে হত্যা করা হলো। আমরা মানুষের জন্য বিনামূল্যে নিঃস্বার্থ ভাবে কাজ করে যাওয়ার ফল বুঝি নির্মম ভাবে নিহত হওয়া!
পরবর্তীতে আশিকের মরদেহ তার গ্রামের বাড়ি বিজয়নগর উপজেলার পত্তন ইউনিয়ন মনিপুর গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে স্থানীয় বন্দর বাজার এলাকায় বালুর মাঠে আশিকের শেষ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার আগে আশিকের বাবা আশরাফ উদ্দিন ও পত্তন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন। তারা খুনিদের ফাঁসি দাবি করেন। পরে মাঠের পাশেই কবরস্থানে আশিককে কবরে চির নিদ্রায় শায়িত করা হয়।
সোমবার (০৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় জেলা শহরের দক্ষিণ মৌড়াইল পাবলিক লাইব্রেরির সামনে সাংবাদিক ও সেচ্ছাসেবী আশিকুল ইসলামকে স্থানীয় সন্ত্রাসী রায়হানের নেতৃত্বে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। নিহত আশিক জেলা শহরের মেড্ডা এলাকার কুয়েত প্রবাসী আশরাফ উদ্দিনের ছেলে। আশিক ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক পর্যবেক্ষণের ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এছাড়াও আশিক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একমাত্র অজ্ঞাত মরদেহ কবর ও রক্তদানকারী সংগঠন ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘরের সক্রিয় সদস্য ছিলেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘরের সভাপতি আজহারউদ্দিন জানান, আশিক সাংবাদিকতার পাশাপাশি ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাতিঘর সংগঠনের সক্রিয় সদস্য ছিল। অজ্ঞাত লাশ কবর ও রক্ত দেওয়ায় আশিক সবসময় সামনের সাড়িতে থাকতো। সোমবার বিকেলে শহরের অবকাশ পার্ক আমাদের সংগঠনের মাসিক সভা ছিল। সভা শেষে আমরা দুইটি ব্যাটারি চালিত অটো রিকশা ও রিকশা যোগে ফিরে আসছিলাম। আশিক আমার অটোরিকশার পেছনে একটি রিকশায় ছিল। সামান্য যাওয়ার পর পাবলিক লাইব্রেরীর সামনে রায়হান নামের একটি ছেলে সহ আরও কয়েকজন দৌড়ে এসে আশিকের শরীরে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ২৫০শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সোহরাব আল হোসাইন জানান, আশিককে হত্যার প্রধান অভিযুক্ত রায়হান মিয়া ওরফে সোহান ও সাফিন আহমেদ জুনায়েদকে রাতেই গ্রেফতার করা হয়েছে। এই ঘটনায় আশিকের বাবা বাদি হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।
Development by: webnewsdesign.com
মন্তব্য করুন