আপডেট

x

নিরাপত্তাহীনতায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া বক্ষব্যাধি হাসপাতাল

বুধবার, ২৭ মার্চ ২০১৯ | ৯:৩০ অপরাহ্ণ |

নিরাপত্তাহীনতায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া বক্ষব্যাধি হাসপাতাল
Spread the love

নানা সমস্যা নিয়েই চলছে দেশের পূর্বাঞ্চলের অন্যতম বিশেষায়িত হাতপাতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়া বক্ষব্যাধি হাসপাতাল। ২০ শয্যা বিশিষ্ট এ হাসপাতালটিতে নানা সমস্যা বিরাজ করছে। ফলে সুষ্টু চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সেবা প্রার্থীরা।
যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করলে জন স্বাস্থ্য রক্ষায় হাসপাতালটি গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করতে পারবে।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৬৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মেড্ডায় প্রতিষ্ঠিত হয় বক্ষব্যাধি হাসপাতাল। ১শ ৮ শতক ভুমির উপর প্রতিষ্ঠিত ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটিতে ২ জন চিকিৎসক, ৪ জন নার্স ৩ জন ওয়ার্ড বয় রয়েছে।
যখন বলা হতো ‘যক্ষা হলে রক্ষা নাই’ সেই সময়ে এই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়ে ধীরে ধীরে এই ভ্রান্ত ধারণা নিয়ন্ত্রন করেছে এই হাসপাতালটি। এখানে যক্ষা রোগীরা চিকিৎসা নিয়ে যখন পূর্ণ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যেতেন তখন মানুষের মাঝে যে ভ্রান্ত ধারনা ছিল যে, ‘যক্ষা হলে রক্ষা নাই’ সেই ধারণার অবসান হতো।

webnewsdesign.com


এই হাসপাতালে যক্ষা রোগ ছাড়াও এ্যাজমা রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী নরসিংদী, হবিগঞ্জ, মৌলভী বাজার থেকে রোগী এসে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয় এখানে। অবস্থা গুরুতর না হলে রোগীরা সচরাচর এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন না। আবার অনেকেই প্রাথমিক চিকিৎসা নেয়ার পর অসচেতনতার কারনে পুণরায় চিকিৎসা নেন না। ফলে আবারো যক্ষায় আক্রান্ত হয় এখানে। চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে যক্ষার ঔষধ নিয়মিত না খেলে যক্ষা ভাল হয় না। শুধু তাই নয় কয়েকদিন ঔষধ খেয়ে তা বন্ধ করে দিলে যক্ষার জীবানূ আরো শক্তিশালী হয়ে মানব দেহে আক্রমন করে। তখন ভাল হবার সম্ভাবনা ক্ষীন হয়ে যায়। তাই নিয়মিত পুরো ডোজ ঔষধ খাবারের পরামর্শ চিকিৎসকের।


হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, লোকলজ্জা ও নানা কারণে রোগীর সংখ্যা কিছুটা কম। বর্তমানে হাসপাতালে ১০ জন রোগী রয়েছে । এছাড়া যক্ষার মত সংক্রামক রোগ বিস্তার রোধে প্রতিষ্টানটি গুরুত্বপুর্ন ভূমিকা রাখলেও জনবলসহ নানা সমস্যার কারনে ব্যাহত হচ্ছে এর কার্যক্রম। শূন্য রয়েছে একাধিক পদ। হাসপাতালের নিজস্ব কোন নিরাপত্তারক্ষী না থাকায় আতংকে দিন কাটছে চিকিৎসকসহ রোগীদের। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলেই গুরুত্বপূর্ন হাসপাতালটির সীমানা প্রাচীরের ভেতরে জমে উঠে বখাটে ও নেশাগ্রস্থদের উৎপাত। ফলে অনেকটা নিরাপত্তহীনতায় ভোগেন কর্মকর্তারা। তারা এ বিষয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন।
সরজমিন গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালটির প্রধান ফটকটির সামনে ঢুকতেই যে টিনের সাইনবোর্ডট দেওয়া আছে তা ঝং পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। চারদিকে গাছপালা গজিয়ে ওঠে হাসপাতালের পরিবেশ অনেকটা স্যাতস্যাতে ও অস্বাস্থ্যকর। যার ফলে মশা মাশির উপদ্রব বেড়ে চলছেই। যেখানে পর্যাপ্ত পরিমান আলো থাকার কথা, সেখানে হাপাতালের চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার বিরাজ করে।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা কয়েকজন রোগীর স্বজন জানান, ‘হাসপাতালে আমাদের সেবা ঠিকমত পেলেও পযার্প্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা না থাকায় ফলে দুর দুরান্ত থেকে আসা রোগীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হচ্ছে’।

বিভিন্ন সমস্যার কথা জানালেন বক্ষব্যাধি হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডাক্তার ফৌজিয়া জাফরিন বলেন, ‘এখানে নৈশ প্রহরীর কোন পোষ্ট নাই। খালি জায়গায় হওয়ায় এখানে কিছু স্থানীয় লোকজন এসে নেশা করে। ২০ বেডের হাসপাতালের হলেও দুটি অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে। যার ফলে রোগীদের সুচিকিৎসা দিতে পারছি না। আমি আইনশৃঙ্খলার বাহিনীর দৃষ্টি আর্কষন করছি যেন হাসপাতালটির রাস্তা দিয়ে নিয়মিত টহল দেয়’।

একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধেও নানা নির্যাতন সইতে হয়েছে এই হাসপাতালটির। পূর্ব ম্ড্ডোর বাসিন্দা শ্রমিক নেতা মো: ফুল মিয়া জানান, যুদ্ধ শুরুর পর পরই পাক সেনারা হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ করে সেখানে ক্যাম্প স্থাপন করে। এ সময় হাসপাতালের বেশ ক্ষয়-ক্ষতি হয়। কিছুদিন এখানে থাকার পর পাকসেনারা সেখান থেকে ক্যাম্প সরিয়ে পার্শ্ববর্তী কোকিল টেক্সটাইলে নিয়ে যায়। তিনি আরো জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর ও আশপাশ এলাকা ৮ ডিসেম্বর শত্রু মুক্ত হয়। শত্রু মুক্ত হবার পরপরই এলাকার রাজাকার ও কিছু সুযোগ সন্ধানী হাসপাতালে থাকা মূল্যবান মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। যদিও দেশ স্বাধীনের পর এ ব্যাপারে একটি মামলা হয়েছিল। কিন্ত পরবর্তীতে মামলা কোন ফলাফল জানা যায়নি।

মন্তব্য করুন

Development by: webnewsdesign.com