আপডেট

x

অপরাধ না হয়েও কেন স্বেচ্ছায় কারাগারে যাচ্ছেন তারা?

শুক্রবার, ৩০ নভেম্বর ২০১৮ | ৯:১৫ অপরাহ্ণ |

অপরাধ না হয়েও কেন স্বেচ্ছায় কারাগারে যাচ্ছেন তারা?
Spread the love

বেশিরভাগ মানুষই চায় কারাগারের বাইরে থাকতে। কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষজন প্রাত্যহিক জীবনের ঝঞ্ঝাট থেকে বাঁচতে কারাগারে গিয়ে থাকাকেই ভালো বলে মনে করছেন।
‘এই কারাগার আমাকে মুক্তির স্বাদ দেয়,’ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান পার্ক হাই-রি (২৮)। অফিস কর্মী পার্ক মাত্র ২৪ ঘণ্টা এই নকল জেলে থাকার জন্য ৯০ ডলার ব্যয় করেন।
২০১৩ সাল থেকে উত্তরপূর্বের হংচিওন এলাকায় ‘প্রিজন ইনসাইড মি (আমার ভিতরের কারাগার)’ নামের এই বন্দীশালায় প্রায় দুই হাজার মানুষ স্বেচ্ছায় বন্দিত্ব গ্রহণ করেছেন। এদের অনেকেই পরিশ্রান্ত চাকুরে এবং ছাত্রছাত্রী। দক্ষিণ কোরিয়ার চরম ব্যস্ত জীবন থেকে রেহাই পেতে তারা এই কারাগারে গিয়ে আশ্রয় নেন।

পাঁচ স্কয়ার মিটারের কারাগার-কক্ষে বসে পার্ক বলেন, ‘আমি অত্যন্ত ব্যস্ত ছিলাম। আমার যা কাজ জমে রয়েছে তাতে এখানে থাকার কথা নয় আমার। কিন্তু, আমি একটু দম নিয়ে নিজের দিকে তাকাতে চাইছি যেন আরও ভালোভাবে বেঁচে থাকা যায়।’

webnewsdesign.com

কারাগারের নিয়ম খুব কঠিন। এখানে অন্য বন্দীদের সঙ্গে কথা বলা যায় না। মোবাইল ফোন বা ঘড়ি ব্যবহার করা যায় না।

বন্দীরা নীল ইউনিফর্ম পরে থাকেন। যোগ ব্যায়াম করার একটা মাদুর এবং লেখার খাতা পান। ঘুমান মেঝেতে। কারাগার কক্ষেই একটা ছোট টয়লেট আছে, কিন্তু কোনও আয়না নেই।

ডিনারের মেন্যুতে থাকে সিদ্ধ মিষ্টি আলু এবং ব্যানানা শেক। সকালের খাবার হিসেবে থাকে জাউ ভাত।

এই কারাগারের সহপ্রতিষ্ঠাতা নোহ জি-হিয়াং বলেন, নকল এই কারাগারের পরিকল্পনা তার স্বামীর কাছ থেকে পাওয়া। তিনি প্রসিকিউটর হিসেবে সপ্তাহে প্রায় ১০০ ঘণ্টা কাজ করতেন।

‘ও প্রায়ই বলত এক সপ্তাহের জন্য সলিটারি কনফাইনমেন্ট বা ‘নির্জন কারাবাসে’ গিয়ে বিশ্রাম নিতে পারলে ওর জন্য খুব ভালো হতো,’ স্বামীর সম্পর্কে বলেন নোহ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রযুক্তি নির্ভর, রপ্তানি চালিত অর্থনীতির কারণে সেখানে স্কুলকলেজ ও কর্মক্ষেত্রে ব্যাপক প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হয় মানুষকে। এটা সেখানকার মানুষের ওপর ব্যাপক দৈহিক-মানসিক চাপ তৈরি করছে। একারণে সেখানে আত্মহত্যার ঘটনাও বাড়ছে।

২০১৭ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিটি মানুষ গড়ে ২,০২৪ ঘণ্টা কাজ করে। মেক্সিকো ও কোস্টারিকার মানুষদের পর তারাই সবচেয়ে পরিশ্রম করে। ৩৬টি সদস্য দেশের ওপর জরিপ চালিয়ে এই তথ্য জানায় অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কোঅপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট।

মানুষকে পরিশ্রম করে বেশি আয়ের সুযোগ করে দিতে সেখানকার সরকার ন্যুনতম মজুরির পরিমাণ বাড়িয়েছে। সপ্তাহে ৬৮ ঘণ্টার বদলে ৫২ ঘণ্টা কাজের আইন জারি করা হয়েছে সেখানে। কিন্তু এসব পদক্ষেপের উল্টো ফল হতে পারে বলে জানাচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা।
নোহ বলেন, কিছু কিছু সেবা গ্রহীতা কারাগারে ২৪ বা ৪৮ ঘণ্টা থাকতে শঙ্কা বোধ করে। কিন্তু একবার থাকার পর তাদের ধারনা পাল্টে যায়।

‘কারাগারে থাকার পর লোকজন বলে, ‘এটা তো কারাগার নয়। সত্যিকারের কারাগার হচ্ছে যেখানে আমরা ফিরে যাচ্ছি, সেই জায়গাটা,’ বলেন তিনি।

সূত্র : পরিবর্তন

 

মন্তব্য করুন

Development by: webnewsdesign.com